বাজারে যেসব এনার্জি ড্রিংকস আছে তার একটিরও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) থেকে নির্ধারিত কোনো প্রকার জাতীয় মান নেই। ফলে দেশের বাজারে যেসব এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি হচ্ছে সেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। এনার্জি ড্রিংকস বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এত দিন যাবত বিএসটিআই থেকে কার্বোনেটেড বেভারেজের লাইসেন্স নিয়ে বাজারে এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি করে আসছিল, যা বিএসটিআই দেখেও না দেখার ভান নিয়ে ছিল। অথচ প্রতিটি এনার্জি ড্রিংকসের বোতলের লেবেলে বিএসটিআই অনুমোদিত লোগো বসানো ছিল। তবে এখন থেকে বাজারে আর কোনো ধরণের এনার্জি ড্রিংকস থাকবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বাজার থেকে সব ধরনের এনার্জি ড্রিংকস তুলে নেওয়ার নির্দেশনা এবং বাহির থেকে যেসব ড্রিংকস আমদানি করা হয় সেগুলোর ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চিঠি পাঠিয়ে বিএসটিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কাস্টমস এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এ নির্দেশনার কথা জানাবে (বিএফএসএ)।
ফলে বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে যারাই কার্বোনেটেড বেভারেজের জন্য লাইসেন্স নেবে তাদের শুধু বিডিএস ১১২৩:২০১৩ কার্বোনেটেড বেভারেজেস মানের মধ্যে থেকে পণ্য উৎপাদন করতে হবে।
এ বিষয়ে বিএফএসএর সদস্য মাহবুব কবির বলেন, ‘কার্বোনেটেড বেভারেজের নামে লাইসেন্স নিয়ে এত দিন যারা এনার্জি ড্রিংকস বাজারজাত করেছে এখন আর তারা তা করতে পারবে না। বাজারে যাদের এনার্জি ড্রিংকস আছে তাদের চিঠি দিয়ে এগুলো তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি যাতে এনার্জি ড্রিংকস আমদানি বন্ধ হয় সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কাস্টমসকেও চিঠি দেওয়া হবে।’
সূত্র মতে, বিএফএসএ বিভিন্ন এনার্জি ড্রিংকসকে পরীক্ষা করে সেখানে ক্ষতিকর মাত্রায় ক্যাফেইনের উপস্থিতি পেয়েছে। কার্বোনেটেড বেভারেজে ক্যাফেইনের মাত্রা প্রতি কেজিতে ১৪৫ এমজি থাকার কথা থাকলেও সেখানে পাওয়া গেছে প্রায় ৩২০ এমজিরও বেশি।
অপরদিকে সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নন-ব্র্যান্ডের কিছু এনার্জি ড্রিংকস পরীক্ষা করে সেগুলোতেও ভায়াগ্রার উপাদান খোঁজে পেয়েছে। এগুলো মূলত বাহির থেকে আমদানি করে আনা হয়।
সূত্র থেকে আরও জানা যায়, বিএসটিআইয়ের সফট ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ শাখা কমিটি এনার্জি ড্রিংকস শিরোনামে মান প্রণয়ন করা হবে কি না, সে বিষয়ে ভোক্তাসাধারণের মতামত চেয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাদের ওয়েবসাইটে ও নোটিশ বোর্ডে।
আর যার প্রেক্ষিতে ২৬টি মতামত পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪টি মতামত আসে জাতীয় মান প্রণয়ন না করার পক্ষে। পরে এটি জাতীয় মান প্রণয়নের নীতিনির্ধারক ও উচ্চতর কমিটি ‘কৃষি ও খাদ্য বিভাগীয় কমিটি’র সভায় উপস্থাপিত হয়। উক্ত বিভাগীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে এনার্জি ড্রিংকস পণ্যের জাতীয় মান প্রণয়ন না করার পক্ষে মতামত প্রদান করে।
সভায় যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তা হলো, ‘এনার্জি ড্রিংকস জাতীয় মান প্রণয়ন ‘না’ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং কার্বোনেটেড বেভারেজ ছাড়া ‘এনার্জি ড্রিংকস’ বা অন্য কোনো নামে পণ্য উৎপাদন বা আমদানি ও বাজারজাত করার সুযোগ নেই।’
এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে কমিটির চতুর্থ সভা সূত্রে জানা যায়, বিএসটিআইয়ের রসায়ন পরীক্ষণ উইংয়ের ঊর্ধ্বতন পরীক্ষক ইব্রাহিম খলিল মতামত দিয়ে বলছেন, ‘কার্বোনেটেড বেভারেজ পণ্যের বর্তমান সংস্করণে যেসব প্রিজারভেটিভসের মাত্রা উল্লেখ রয়েছে তা অনেক বেশি।’
এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের পরিচালক ইসহাক আলী বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত প্রচুর এনার্জি ড্রিংকসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি, যেগুলোর কোনোটাতেই ক্যাফেইন ১৪৫-এর ওপরে পাইনি। আমাদের জানা মতে কার্বোনেটেড বেভারেজের নামে কেউ এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে না।
বিএসটিআইয়ের এ পরিচালক আরও বলছেন, ‘তবে যারা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে এনার্জি ড্রিংকসের কথা বলছে তাদেরকে আমরা চিঠি দিয়ে বিজ্ঞাপনের ভাষা পরিবর্তনের কথা বলেছি।’