টপ পোষ্ট

তবু তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাব

0

তবু তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাবলেখাটি শুরু হোক একটি ব্যর্থ গভীর প্রেমের গল্প দিয়ে। মেয়েটি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের খুব ভক্ত। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম—কী নেই; সবকিছুতে সাকিবের ফলোয়ার। শুধু তা-ই নয়, খেলা থেকে ব্যক্তি সাকিব-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য জানতে সবাই তাকে জিজ্ঞাসা করে। মেয়েটিও হাসিমুখে সঠিক উত্তর দিয়ে দেয়। কখন যে মেয়েটি সাকিবের প্রেমে পড়ে গেল নিজেই বুঝতে পারল না। ভুলেই গেল প্রিয় তারকাকে দূর থেকে ভালোবাসাই ভালো। একদিন সাকিবের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগও এল মেয়েটির সামনে। সেটা আরেক কাহিনি। প্রিয় তারকাকে নিয়ে ভালোই মজে ছিল নিজের মতো করে। সমস্যা হলো, সাকিব শিশিরকে বিয়ে করেন। সব রাগ গিয়ে পড়ল বেচারা সাকিবের বউ শিশিরের ওপর। আরও শত শত সাকিবের নারী ভক্তের মতো এই মেয়েটিরও মন ভেঙে গেল। কিন্তু সাকিবের বিয়ের পর অভিমান থেকে ফেসবুকে লাইক দেওয়া হয়তো বন্ধ হলো, কিন্তু মনের গোপন কুঠুরিতে সেই প্রেম থেকেই গেল।
প্রিয় তারকার প্রেমে পড়ার ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটে। কারও কারও ক্ষেত্রে ক্লাসের সহপাঠী বা অফিসের সহকর্মীকেও দূর থেকে ভালোবাসেন অনেকে। বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে দূরে একঝলক যাঁকে দেখলেন, মনে মনে ভাবলেন, সে-ই হয়তো আপনার ভালোবাসা। তবে এটাকে ভালোবাসা না বলে ‘ক্রাশ’ বলাই ভালো।

শুধু একবার তোমাকে ছোঁব
ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব
স্পর্শ সুখে লেখা হবে অজস্র কবিতা।
—আকাশ সিরিজ, নির্মলেন্দু গুসণ
প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষকে ছুঁয়ে দেওয়ার আকুতি আবেদন থাকে। থাকবে। সেটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। দূর থেকে ভালোবাসা হতেই পারে। মুখ ফুটে হয়তো বলার সুযোগ থাকে না। সেই মানুষ যদি বুঝে নিতে পারেন, তাহলে সমাধানে আসা যায়। একতরফা হলে ভালো বাসতে বাসতে শেষ না হয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
কেউ কেউ আবার বাড়াবাড়ি করে ফেলেন। তারকার সঙ্গে নিজের ব্যক্তিজীবনকে মিলিয়ে ফেলেন। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, সেলিব্রিটি ওরসিপ সিনড্রোম (সিডব্লিউএস) বলে একে। খেলোয়াড়, সিনেমার নায়ক-নায়িকা, সংগীতশিল্পী, রাজনীতিবিদ, আলোকচিত্রী, সাংবাদিকেরও প্রেমে পড়েন। গবেষণা বলে, টিভি, সিনেমার তারকা ও পপ তারকার প্রতি এই ভালোবাসা বেশি জন্মায়। এই অবসেশন যখন মানসিক রোগের পর্যায়ে পড়ে, তাঁরা তা বুঝতে পারেন না। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশ করা হয়, ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে তারকা নিয়ে ফ্যান্টাসি করার প্রবণতা বেশি থাকে। মেয়েরা যেমন টম ক্রুজকে তাঁদের স্বপ্নের নায়ক মনে করে, ছেলেদের কাছে এখনো অ্যাঞ্জেলিনা জোলি শীর্ষে আছেন।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বিষণ্নতা, অতিরিক্ত উদ্বেগ, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণ এই সিডব্লিউএস। পিপল ম্যাগাজিনের একটি জরিপে দেখা যায়, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, জাস্টিন বিবার, মাইকেল জ্যাকসন, টেইলর সুইফট, মেরিলিন মনরোর জন্য মানুষের এই প্রবণতা বেশি হয়। ৩৬ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিকের মধ্যেও এই রোগ দেখা যাচ্ছে বলে আরেকটি গবেষণা প্রকাশ করে লিসেসটার বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণা যা-ই বলুক, মনের প্রেম আটকে রাখা যাবে না। তবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ তো করা যায়ই। বাস্তব জীবনের সঙ্গে খাপ খায় না, এমন কোনো কিছুতে না এগোনোই ভালো। তা না হলে এই জীবনে ব্যাঘাত ঘটবে।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ লিখেছিলেন—
ব্যথা দাও, বুকে রাখব
ব্যথার জন্যই তো হৃদয়।
(ব্যথা দাও বুকে রাখব)

আপনি সিডব্লিউএসে ভুগছেন কি না, একটা পরীক্ষা করতে পারেন
১. প্রিয় তারকার কথা শোনা, লেখা ও সব অনুষ্ঠান উপভোগ করেন?
২. আপনি কি মনে করেন তারকার জীবনে কত আনন্দ?
৩. তারকার যেকোনো খবর পড়ে সময় কাটাতে ভালোবাসেন?
৪. এই তারকার অন্য ভক্তদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন?
৫. আপনি যখন কোনো দলের সঙ্গে থাকেন, তখন প্রিয় তারকাকে নিয়ে কথা শুনতে চান?
৬. শুধু কি ফলোয়ার হিসেবে থাকাই উপভোগ করেন?
৭. তারকার সর্বশেষ তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসেন?
৮. তাঁর যেকোনো অভ্যাস আপনার ওপর প্রভাব পড়ে?
৯. তারকার স্মারক বা ছবি বিশেষ কোনো জায়গায় রাখেন?
১০. কখনো এমন মনে হয়েছে, প্রিয় তারকা মরে গেলে আপনিও মরে যাবেন?

স্কোরিং
১. আপনার স্কোর যদি ১ থেকে ৩-এর মধ্যে হয়, তাহলে আপনি মধ্যম সিডব্লিউএসে আক্রান্ত।
২. স্কোর ৪ থেকে ৭ হলে আপনি ভয়াবহভাবে এই সিনড্রোমে ভুগছেন।
৩. সব উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে তারকাই আপনার জীবনের সবকিছু।
(প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে ১ নম্বর এবং ‘না’ হলে ০ ধরে হিসাব করতে হবে)

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন