টপ পোষ্ট

সুস্থ জীবন পেতে প্রতিদিন খান `জীবন্ত` খাবার

0

খাদ্য ছাড়া কোনো মানুষ তার জীবন কল্পনা করতে পারে না। কিন্তু আমরা কি কখনও চিন্তা করি যে, প্রকৃতির দ্বারা মানুষের জন্য কোন ধরনের খাবারের ধারণা করা হয় এবং নির্দিষ্ট পণ্যগুলো আমাদের কী দেয়? একটি খাদ্যকে জীবন্ত এবং অপরটিকে মৃত খাদ্য বলা হয় কেন?

ধরণভেদে পুষ্টিবিজ্ঞানীগণ খাবারকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন- জীবন্ত খাবার, অর্ধমৃত খাবার এবং মৃত খাবার।

১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি তাপে দীর্ঘসময় ধরে রান্না করা সব খাবারই মৃত খাবার। কারণ উচ্চতাপে খাবার রান্না করলে এর ভেতরের সব লাইফ ফোর্স ও এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। এজন্যে সব ধরণের তেলে ভাজা খাবার, বিরিয়ানি, তেহারি, গ্রীল, কাবাব, রেজালা, কালাভুনা ইত্যাদি সবই মৃত খাবার।

প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার- চিপস, বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি, ফাস্ট ফুড, জুস, কোমল পানীয় এগুলোও মৃত খাবার। এসব খাবারে না থাকে কোনো এনজাইম, না ফাইটোক্যামিকেল, না বায়ো-ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জি। লাইফ ফোর্সও হারিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, জীবন্ত খাবারকে যখন ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপে রান্না করা তখন তা ‘অর্ধমৃত’ খাবার। এসব খাবারে কিছু এনজাইম ও প্রাণশক্তি থাকে। তবে তা জীবন্ত খাবারের চেয়ে কম।

কাজেই প্রাকৃতিক খাবারই জীবন্ত খাবার। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, কোনো খাবারকে প্রকৃতিতে যে অবস্থায় পাওয়া যায় বা উৎপন্ন হয় সেই অবস্থাতেই খাওয়া হলে তা হবে জীবন্ত খাবার।

সকল জীবিত প্রাণী ও উদ্ভিদ এনজাইম তৈরি করে। এনজাইম ছাড়া জীবন চলতে পারে না। খাবার ভালোভাবে হজম হওয়ার জন্যে খাবারে পর্যাপ্ত এনজাইম বা পাচক রস থাকা প্রয়োজন। আর পর্যাপ্ত এনজাইম থাকে জীবন্ত খাবারে।

সব ধরণের তাজা ফল, কাঁচা সবজি, সালাদ, গ্রিন জুস, রেড জুস, বাদাম, মটরশুঁটি, ছোলা, বীজ ও বিন, রসুন, আদা, হলুদ- এগুলোকে কাঁচা অবস্থায় খেলেন মানে জীবন্ত খেলেন।

কেন খাবেন জীবন্ত খাবার?

লাইফস্টাইল এক্সপার্টরা এখন জোর দিয়ে বলছেন, সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকতে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কমপক্ষে ৭০ শতাংশ জীবন্ত খাবার থাকতে হবে।

পুষ্টিবিজ্ঞান এবং এনজাইম বিষয়ক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের একজন নেতৃস্থানীয় গবেষক ড. হাওয়ার্ড এফ লুমিস জুনিয়র। Enzymes: The Key to Health বইতে তিনি বলেছেন- খাবারে ভিটামিন-মিনারেল কতটুকু আছে সে ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক থাকি, কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো খাবারের এনজাইম। ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে স্বল্পমেয়াদি কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় বটে, কিন্তু খাবারের এনজাইমের অভাবে শরীরে সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদি নানাবিধ জটিলতা।

সুষম খাবারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো ফাইবার বা আঁশ, যা রেচনের জন্যে জরুরি। শাকসবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। কিন্তু অধিক তাপে রান্না করলে ফাইবার বা আঁশ তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যে-কারণে নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার পরও কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্য ও রেচনতন্ত্রের সমস্যা হয়।

মৃত খাবার কেড়ে নেয় প্রাণবন্ততা

এনজাইমশূন্য মৃত খাবার শরীরে শক্তি ও পুষ্টি জোগানোর বদলে শরীরের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এসব খাবার হজম করার জন্যে শরীরকে প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে হয়। ফলে দিনের পর দিন মৃত বাবার খেলে শরীর-মন হয় ক্লান্ত, অবসন্ন, উদ্যমহীন, অবসাদগ্রস্ত।

গবেষকেরা বলছেন, এখন যে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক দুর্বল এবং রোগবালাই বিশেষত অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে তার একটি বড় কারণ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জীবন্ত খাবারের চেয়ে মৃত খাবারের পরিমাণ বেশি থাকা।

আসলে মৃত খাবার কখনো একজন মানুষকে সুস্থ রাখতে পারে না। কাজেই সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকতে জীবন্ত খাবারের বিকল্প নেই।

কীভাবে খাবেন?

সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। দিনে খান দুই-তিন রকম ফল। বিভিন্ন রকম বাদাম, বীজ, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি একদিন ভিজিয়ে রেখে অঙ্কুরিত হলে খেতে পারেন। দুপুরে মূল খাবারের আধাঘণ্টা আগে খেতে পারেন একপ্লেট সালাদ। আর দিনের যে-কোনো সময় পান করুন এক গ্লাস গ্রিন জুস অথবা বিটের জুস।

শাকসবজি অর্ধসেদ্ধ ও অল্প তাপে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করুন। খাদ্য তালিকায় মৃত খাবারের পরিমাণ সীমিত রাখুন। প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যথাসম্ভব বর্জন করুন।

এভাবে ছয়মাস খেয়েই দেখুন না! দেখবেন আপনি অনেকটাই বদলে গেছেন। ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কর্মক্ষমতা ও প্রাণবন্ততা বেড়ে যাবে বহুগুণ। প্রতিদিন ৭০ শতাংশ জীবন্ত খাবার খেলে আপনি হবেন সুস্বাস্থ্যপূর্ণ দীর্ঘজীবনের অধিকারী।

লেখাটি শহীদ আল বোখারী মহাজাতক-এর “শুদ্ধাচার” বই থেকে নেওয়া

শেয়ার করুণ

Comments are closed.