টপ পোষ্ট

কেনাকাটার আসক্তি-শুদ্ধাচার

0

কেনাকাটা এক চমৎকার শিল্প। শিল্পিত রুচি নিয়ে প্রয়োজনীয় ও পরিমিত কেনাকাটা জীবনকে করে তোলে আনন্দঘন। আর কেনাকাটা যদি হয় বাতিক, তবে আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্ত। ক্রয়-আসক্তি নষ্ট করবে আপনার প্রশান্তি। আর খুচরা কেনাকাটার পর দোকানদার যদি বলে, ‘আপনার মতো সমঝদার ক্রেতা আর হয় না! আপনি জিতে গেলেন’, তাহলে নিশ্চিত থাকবেন−আপনি নির্ঘাত ঠকেছেন। আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে, ঋণ করে ও কিস্তিতে ভোগ্যপণ্য কিনলে আপনি পড়বেন সর্বনাশের চোরাবালিতে।

তাই আয়ত্ত করুন কেনাকাটার ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয়গুলো। দৈনন্দিন কেনাকাটায় কিছু শুদ্ধাচার অনুসরণ আপনার ভোগান্তি কমাবে, সময়ও বাঁচাবে। পণ্যদাসত্ব বা ক্রয়-আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন আপনি।

ক্রেতা হিসেবে

> আবেগবশত বা চাকচিক্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়; শুধু প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতেই কেনাকাটা করুন।

> কম সময়ে কেনাকাটা করতে দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা ও সম্ভাব্য বাজেট নির্ধারণ করে নিন।

> প্রথম দোকান থেকেই কিনবেন না। অন্তত তিনটি দোকানে পণ্যের মান, ধরন ও দাম যাচাই করুন।

> ফ্রি, ডিসকাউন্ট/ মূল্যছাড় ও বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেবেন না। পণ্য কেনার ক্ষেত্রে নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করুন। মনে রাখুন, ‘সস্তার তিন অবস্থা’!

> কেনার মোহ এবং প্রতারণা থেকে রেহাই পেতে প্রার্থনা করে বাজারে প্রবেশ করুন।

পণ্য দেখার ক্ষেত্রে

> একটি জিনিস কিনতে গিয়ে পুরো দোকান ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না।

> খেয়াল রাখুন, কোনো জিনিস দেখতে গিয়ে যেন নষ্ট হয়ে/ ভেঙে না যায়।

> ডিসপ্লে থেকে কোনোকিছু নিয়ে দেখলে তা আবার যথাস্থানে রাখুন। তবে ডিসপ্লেতে রাখা জিনিস ধরা বা ছবি তোলার ব্যাপারে আগেই অনুমতি নিয়ে নিন।

> ওষুধ প্রসাধনী খাবার ও পচনশীল দ্রব্য কেনার আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ দেখে নিন।

> দাম জানতে প্রথমে ট্যাগ দেখুন। ট্যাগ না থাকলে বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করুন।

> সবজি বা ফল কেনার সময় খোসায় নখের আঁচড় লাগাবেন না।

> কেনার ইচ্ছা না থাকলে বাদাম, বরই−এ ধরনের খাদ্যদ্রব্য খেয়ে দেখার মানসিকতা পরিহার করুন।

দরদাম করায়

> কেনার ইচ্ছা না থাকলে একটার পর একটা পণ্য দেখাতে বলবেন না। দরদামও করবেন না।

> কেনাকাটায় দরদাম করতে কখনো সংকোচ করবেন না। কোনো পণ্য দেখে পছন্দ না হলে ‘দুঃখিত’ বলে চলে আসুন।

> দরদাম করার সময় বিক্রেতা যে দাম বলবেন, অবস্থা বুঝে তার এক-তৃতীয়াংশ থেকে শুরু করুন। এ-ক্ষেত্রে রাউন্ড ফিগার না বলে খুচরো পরিমাণ দিয়ে বাড়াতে থাকুন।

> ‘বিক্রিত মাল ফেরত নেয়া হয় না’ লেখা দোকানে কোনো জিনিস ফেরত নিতে জোরাজুরি করবেন না।

> ‘আপা/ ভাই, এই একটাই পিস আছে …/ ‘আনকমন …/ ‘এটাই এখন চলছে …’−বিক্রেতার এসব কথায় প্রভাবিত হয়ে কিনবেন না।

> অন্যদের পরামর্শ নিতে পারেন কিন্তু আপনার জিনিস কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি নিজে। তবে মূল্য পরিশোধের আগে একটু থামুন, লম্বা দম নিন। মনকে বলুন, আসলেই এটি আপনি পছন্দের সাথে ব্যবহার করবেন কিনা। মন থেকে সম্মতি পেলে সানন্দে কিনুন।

> কেনার পরে বদলানোর/ ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুসরণ করুন। আপনার কাছে থাকাকালে খেয়াল রাখুন, পণ্যের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

একাধিক ক্রেতা থাকলে

> আপনার আগে আসা ক্রেতাকে অগ্রাধিকার দিন।

> বিক্রেতার সাথে অন্য ক্রেতা যখন কোনো পণ্য নিয়ে কথা বলছেন, আপনার পছন্দ হলেই তখন তার হাত থেকে সেটা টেনে নেবেন না। বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করুন অতিরিক্ত আছে কিনা।

> অন্য কেউ বিক্রেতার সাথে দরদাম বা আলোচনারত থাকলে অপেক্ষা করুন।

> দোকানে ভিড় থাকলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, ধাক্কাধাক্কি করবেন না।

লেখাটি শহীদ আল বোখারী মহাজাতক- এর “শুদ্ধাচার” বই থেকে নেওয়

শেয়ার করুণ

Comments are closed.