টপ পোষ্ট

বন্যপ্রাণী প্রজননে দেশ সেরা শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

0

আফ্রিকা বিশ্ব জীব বৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র। আর ‘কালো বনভূমি’ নামে বিখ্যাত আফ্রিকার গহীন জঙ্গল। মাইলের পর মাইলজুড়ে ঘনগহীন জঙ্গলে ভয়ঙ্কর সব প্রাণির বসবাস। এর মধ্যে সিংহ, জেব্রা ও জিরাফ অন্যতম।

শক্তিধর প্রাণিদের দিক থেকে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে সিংহ। অনেকের শৈশবও কেটেছে সিংহ ও বাঘ মামার গল্পের সঙ্গে। সারাবিশ্বেই ভৌগোলিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আজ বন্যপ্রাণীর সংখ্যা হাতে গোনা।

প্রাণিকূলের বংশবৃদ্ধি ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৩ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের বড় রাথুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের পিরুজালী মৌজার খণ্ড খণ্ড শালবনের প্রায় ৫ হাজার একর বনভূমি ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পার্কটি সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। এরই মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, জেব্রা, জিরাফ, ক্যাঙ্গারু, হাতি, ব্ল্যাক সোয়ান, উট পাখি, কমন ইল্যান্ড, ব্ল্যাক বাক, নিয়ালা, ইমু পাখি, মহাবিপন্ন মদনটাক ও কালিমসহ আরও কিছু দেশি-বিদেশি বন্যপ্রাণী ও পাখি থেকে বাচ্চা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকাল ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহার্নেসবাগ থেকে মেসার্স ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে ২টি পুরুষ ও ৫টি মাদি সিংহ আনা হয়। এছাড়াও আনা হয় আরও ৪টি সাদা প্রজাতির সিংহ। বর্তমানে সাফারি পার্কে সিংহ পরিবারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫টিতে।

আফ্রিকার আবহাওয়ার সঙ্গে দেশের আবহাওয়ার তেমন তারতম্য না থাকায় খুব দ্রুতই দেশের পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে তারা। গত পাঁচ বছরেই এই সাফারি পার্ক এখন সিংহ প্রজননে দেশ সেরা অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।

কোর সাফারীর সিংহ বেষ্টনীতে এখন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিংহ রয়েছে। দ্রুতই কিছু সিংহ অন্যত্র স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহার্নেসবাগ থেকে ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বেঙ্গল জাতের ছয়টি বাঘ কেনা হয়। পরে একই জাতের আরও তিনটি বাঘ কেনা হয়। পরে রয়েল বেঙ্গল থেকেও ২০১৭ সালের মার্চ মাসে তিনটি বাচ্চা পাওয়া গিয়েছিল।

জেব্রা থেকে ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সালের ১৪ মে ও চলতি বছরের ৬ মার্চ বাচ্চা পাওয়া গেছে। বর্তমানে পার্কে জেব্রার সংখ্যা ১৪টি।

এদিকে আফ্রিকার অপর বন্যপ্রাণী জিরাফ থেকে তিনটি, ক্যাঙ্গারু থেকে একটি, হাতি থেকে দুটি, জলহস্তী একটি, ব্ল্যাক সোয়ান দশটি, উট পাখি চারটি, কমন ইল্যান্ড একটি, ব্ল্যাক বাক একটি, নিয়ালা একটি, ইমু পাখি তিনটি, মহাবিপন্ন মদনটাক তিনটি, ময়ূর ৩৫টি, হরিণ ও কালিম পাখি থেকেও বাচ্চা পাওয়া গেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান জানান, আমরা সাফারি পার্কে সম্পূর্ণ বন্য পরিবেশে প্রাণিদের আবাসভূমি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। তাদের খাদ্যাভাসে বিশেষ নজরদারী, উপযুক্ত বাসস্থান, সঠিক পরিচর্যা ও কর্মচারীদের আন্তরিকতাতেই মূলত প্রজননে সফলতা পেয়েছি। প্রজননে সাফল্য পাওয়ায় সাফারি পার্কের চাহিদা মিটিয়ে এখন কিছু বন্য প্রাণি অন্যত্র স্থানান্তর জরুরি। সবচেয়ে অবাকের বিষয় আমরা আফ্রিকান ব্রাউন সিংহ হতে চারটি সাদা সিংহও পেয়েছি।

পার্কের অপর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. সরোয়ার হোসেন খান জানান, পার্কে এ পর্যন্ত সিংহ থেকে বেশি বাচ্চা পাওয়া গেছে। বাঘ থেকে বাচ্চা পাওয়ার জন্য তাদের প্রতি এখন বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। অন্যান্য প্রাণিগুলোর প্রতিও বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। এ পার্কের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে প্রাণিরা বন্য পরিবেশে উন্মুক্ত থাকে। আর দর্শনার্থীরা আবদ্ধ অবস্থায় গাড়িতে করে তা উপভোগ করে। বন্য পরিবেশ ও কর্তৃপক্ষের নজরদারীর কারণেই এখানে প্রাণিদের বংশবৃদ্ধি বাড়ছে। আর সিংহ প্রজননে এখন এ পার্কই দেশের সেরা অবস্থানে রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, সাফারি পার্কটি দক্ষিণ এশীয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ড এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের কতিপয় ধারণা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সাফারি পার্কের চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী ঘেরা এবং এর মধ্যে দেশি-বিদেশি বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে পর্যটকগণ চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ লাভ করতে পারে।সূত্র: জাগো নিউজ

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন