টপ পোষ্ট

ইসি ও দলগুলোর সঙ্গে বসতে চান বিদেশীরা

0

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গোটা প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বসতে চান বিদেশীরা। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার অংশ হিসেবে তাদের এ আগ্রহের কথা এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করেছেন। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তারা। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হোক- এমন প্রত্যাশা থেকে এসব কার্যক্রম শুরু করেছেন বিদেশীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশী কূটনীতিকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন। জাতিসংঘের নেতৃত্বে কয়েকটি দেশের ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকরা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারপক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। জানতে চাইলে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনস সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ মুহূর্তে আলোচনায় না গেলেও কোনো একপর্যায়ে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইইউ ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকরা রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন।
ইউরোপীয় এক কূটনীতিক যুগান্তরকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ না পেলেও তার (রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ, সার্চ কমিটি গঠন এবং নির্বাচন কমিশন ঘোষণার পুরো প্রক্রিয়া তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি যেসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে সেটিও কূটনীতিকরা খতিয়ে দেখছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকই এখন তাদের প্রথম লক্ষ্য। নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরপরই সাক্ষাতের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। বাংলাদেশ-ইইউ সাব-কমিটির বৈঠকে অংশ নিতে বর্তমানে ইইউ রাষ্ট্রদূত ব্রাসেলসে অবস্থান করছেন। তিনি ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরবেন। অনেক বিদেশী রাষ্ট্রদূতই কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ব্যস্ত।
একাধিক কূটনীতিক সূত্র জানায়, বিদেশীরা ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সরকার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্ল–ম বার্নিকাট সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে রাজনৈতিক ইস্যু আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআই কার্যক্রম সম্পর্কেও কূটনীতিকদের কৌতূহল রয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআরআই পরিদর্শন করেছে।
এদিকে বিদেশী কূটনীতিকরা নির্দিষ্টসংখ্যক বিএনপি নেতার সঙ্গে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা করছেন নিয়মিত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামা ওবায়েদের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের যোগাযোগ আছে। কোনো কোনো বিএনপি নেতা বিদেশ গিয়েও যোগাযোগ রক্ষা করছেন। আগামীতে কূটনীতিকরা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনা ও প্রস্তুতি নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করতে পারেন।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরে আজ বুধবার বাংলাদেশ-ইইউ রাজনৈতিক সংলাপ হতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বৈঠকের মূল এজেন্ডা নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার। পররাষ্ট্র সচিবের কাছে আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার দ্বিপক্ষীয় সফরে জার্মানি যাচ্ছেন। সেখানে ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের সুযোগে প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে মার্কেলকে অবহিত করতে পারেন। বাণিজ্যসহ অপরাপর দ্বিপক্ষীয় ইস্যু আলোচনায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে অন্য নেতাদের সঙ্গে সাইডলাইনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনা হতে পারে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত আগেই ঘোষণা করেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিশনের সঙ্গে তারা বৈঠক করবেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এর আগে বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতা করেছে। সেসব প্রকল্পের অধীনে আধুনিক ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নানা কার্যক্রম নেয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা নির্বাচন’র পর ওইসব প্রকল্পের অনেক বন্ধ করে দেয় উন্নয়ন সহযোগীরা। অনেক প্রকল্পের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়ে। ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়ারে মায়াদোন বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন চাইলে তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা আমাদের নিজেদের ব্যাপার। বর্তমানে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে. তার অধীনেই যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়, সেক্ষেত্রে বাইরের বন্ধুদের ভূমিকা মুখ্য হয়ে উঠবে না। তবে আমরা নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে বিদেশীদের আগ্রহ দেখা দেবে। আমরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করলে বিদেশীদের ভূমিকা পালনের আশংকা থেকে যায়। স্বাধীন দেশ হিসেবে বিদেশীদের নেতিবাচক সুযোগ আমরা দিতে চাই না।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে বিদেশীদের সম্পৃক্ততার বিশেষ দিক হল, গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়াই তারা পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে চান। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্ল–ম বার্নিকাট যুগান্তরকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু ভোটের দিনে যা কিছু ঘটে সেটা নয়। বরং ভোটের আগেই দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ও বিতর্ক করার অবাধ সুযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, গণমাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে ভোটের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিবেদন করতে পারে, তারও সুযোগ থাকতে হবে।
ঢাকায় একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক যুগান্তরকে জানান, তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং এ নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকবেন। নির্বাচন নিয়ে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চান না। নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পর্যবেক্ষণমূলক মন্তব্য করেননি বিদেশীরা। কারণ তারা নতুন নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম কিছুটা দেখার পর সে বিষয়ে পর্যালোচনা করবেন। বিদেশীরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। পাশাপাশি সব দলের অংশগ্রহণও দেখতে চান।
পশ্চিমা বিশ্ব বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা নির্বাচন’র ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়ায় ইইউ তাদের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশন প্রত্যাহার করে নেয়। তবে প্রতিবেশী ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ কিছু কিছু দেশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা হিসেবে অভিহিত করে সমর্থন জানায়।
সূত্র ঃ যুগান্তর পপ
শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন