টপ পোষ্ট

জন্মদিনেই বাড়ি ফিরলেন প্রাণহীন উত্তম

0

পুলিশ কর্মকর্তা ছেলে ভীষণ ব্যস্ত। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ছেলের জন্মদিন। বাড়ি আসতে পারবে না। ছেলের পছন্দ পায়েস। তাই ঢাকায় গিয়েই ছেলেকে পায়েস রান্না করে খাওয়ানোর জন্য পাঁচ লিটার দুধ কেনেন মা। রোববার বিকেলে সেই দুধ যখন জ্বাল করছিলেন, তখনই খবর আসে তাঁর আদরের ছেলে আর নেই। বাসের চাপায় সব শেষ হয়ে গেছে। ব্যস্ত ছেলে জন্মদিনে বাড়ি এলেন ঠিকই, তবে প্রাণহীন নিথর।

এ মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না উত্তম সরকারের মা কামনা সরকার। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন, আহাজারি করছেন। ওদিকে স্বামীকে হারিয়ে দুই মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্ত্রী তমা চৌধুরী। কারও কোনো সান্ত্বনাই তাঁর কান্না থামাতে পারছে না। সোমবার বিকেলে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা সদরের বেতডোবা এলাকায় তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। শুধু স্বজনেরা নন, উত্তমের মৃত্যুতে কাঁদছে যেন পুরো গ্রাম। গতকাল রোববার ঢাকায় ঈগল পরিবহনের জব্দ করা একটি বাসের চাপায় নিহত হন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) উত্তম সরকার।

পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের ভজন সরকারের ছেলে উত্তম লেখাপড়ায় ছিলেন যেমন মেধাবী, তেমনি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল তাঁর সরব পদচারণ। গিটার, তবলা, বাঁশি যেমন বাজাতেন, তেমনি ক্রিকেটের মাঠেও ছিলেন কালিহাতীর সেরা। কালিহাতী আরএস হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কালিহাতী কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর উত্তম ভর্তি হন ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০০৮ সালে মার্কেটিংয়ে বিবিএ শেষ করে দেশে আসেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

উত্তম সরকারের বাড়ির সামনে যেতেই শোনা যায় তাঁর স্ত্রীর কান্নার শব্দ। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে দুই মাসের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে তমা চৌধুরী বিলাপ করছেন। স্বজন ও প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিতে এসে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না। তমা বিলাপ করছিলেন, ‘আমার স্বামী কী এমন অপরাধ করেছিল যে তাঁর এমন অবস্থা হলো। কে দেখবে শিশুকন্যাকে।’

পাশের ঘরে উত্তমের মা কামনা সরকার বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁকে ঘিরে আছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। উত্তমের বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁর মা। অধিক শোকে তিনি কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন।

উত্তমের বড় ভাই দীপংকর সরকার বলেন, ‘উত্তম পেশার প্রতি ছিল খুবই আন্তরিক। রাত-দিন সে কাজ করত।’ ওই এলাকার দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ‘উত্তমের মতো মেধাবী ও প্রতিভাবান ছেলে এই এলাকায় আর নেই। তার মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। তাঁকে শেষবারের মতো দেখার জন্য অপেক্ষা করছে শত শত মানুষ।’

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন