টপ পোষ্ট

নিহত আইএস যোদ্ধাদের সন্তানরা কোথায় যাবে

0

লিবিয়ার সির্তে শহর থেকে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীকে উৎখাত করা হয় প্রায় দুই বছর হলো। কিন্তু এ লড়াইয়ে যাদের ফেলে যাওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল কিছু শিশু আইএস-এর নিহত বিদেশি যোদ্ধাদের সন্তান।

এদের মধ্যে অনেককেই নিজের দেশে আত্মীয়-পরিজনের কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও, ২০টি শিশু এখনো পশ্চিমাঞ্চলীয় মিসরাটা শহরে রয়ে গেছে।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা তাদের অবস্থা জানাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এদের বয়স দুই বছর থেকে ১৪ বছর। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে এরা প্রাণে বেঁচেছে ঠিকই। কিন্তু সেই যুদ্ধের ক্ষত রয়ে গেছে তাদের দেহে আর মনে। সারা জীবন এ ক্ষত তাদের বয়ে বেড়াতে হবে। এ শিশুদের প্রায় সবার দেহে রয়েছে গভীর ক্ষত, পোড়া দাগ, আঘাতের চিহ্ন। আঘাতের কারণে একটি শিশুর হাত কেটে ফেলা হয়েছে।

বিবিসি বাংলা বলছে, তাদের সময় কাটে টিভিতে কার্টুন দেখে, নয়তো গান গেয়ে, নয়তো চোর-পুলিশ খেলে। এর বাইরে তাদের করারও কিছু নেই। আর এ অবস্থায় তাদের থাকতে হয়েছে গত একটি বছর। এদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখছেন মনোবিজ্ঞানী ফয়সাল। শিশুদের সঙ্গে মাসের পর মাস দীর্ঘ আলাপ করার পর তিনি এ শিশুদের পরিচয় সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন। এদের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিনটির কথা তিনি এখনো মনে করতে পারেন, এ শিশুরা সবসময় প্যানিক অ্যাটাকে ভুগত। তাদের ঘুম হতো খুবই কম। এরা যখন তখন প্র¯্রাব করে ফেলত। তারা কথা বলতে চাইত না। তারা একা একা থাকতে চাইত।

এ আশ্রয় শিবিরে বেশিরভাগ শিশুই মিসরীয়। এদেরই একজন জুমানা। ১০ বছর বয়সী এ মেয়েটি যুদ্ধে তার বাবা-মা আর দুই ভাইয়ের মধ্যে একজনকে হারিয়েছে। তার ছোট ভাই ইসমাইলকে নিয়ে এখন সে এ শিবিরের বাসিন্দা। সে জানালো, সব সময় তার বাবা-মার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে মিসরে পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা। তার দাদা, দাদি, কাকার কথা।

জুমানাসহ অন্য শিশুরা মাসের পর মাস ধরে লিবিয়ার যুদ্ধে বিধ্বস্ত এলাকায় আটকা পড়ে ছিল। সেখানে খাবার ও পানির ছিল তীব্র সংকট।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সমর্থিত বাহিনী যখন আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়ছিল তখন বহু আবাসিক এলাকা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। অনেক খোঁজখবর করে মিসরে জুমানার পরিবারের সন্ধান মেলে।

তার দাদা-দাদি এবং কাকার সঙ্গে যখন সংবাদদকর্মীদের দেখা হয় তখন তাদের মুখে ছিল মলিন হাসি। আশাভঙ্গের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল তাদের চোখেমুখে।

‘তিন বছর আগে যখন আমার ছেলে লিবিয়ায় চলে যায় তারপর থেকে নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পাইনি। প্রতিবার যখন আমি গাড়ির হর্ন শুনি, আমার মনে হয় এ বুঝি তারা ফিরে এল। আমার মনে হয় এ বুঝি তারা দরোজায় কড়া নাড়বে।’ দাদি আজিজা বলছিলেন।

জুমানা, তার ভাই এবং অন্য মিসরীয় শিশুদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘদিন ধরে। জুমানার কাকা রামাদান এ নিয়ে বহু দেন দরবার করেছেন। তিনি জানালেন, সরকারি প্রক্রিয়া বেশ ধীর। তারা যদি বলত শিশুদের ফেরত পেতে আমাকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে, সেটা বুঝতে পারতাম। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে তারা কিছু বলছে না। তারা শুধু আইন দেখায়। বলে এটা বাকি, ওটা বাকি। আমি চেয়েছিলাম আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে লিবিয়া যাব এবং বাচ্চাদের ফেরত আনবো। কিন্তু তারা আমাকে সেই অনুমতিও দিচ্ছে না।

সুতরাং, সরকারি প্রক্রিয়া যত দিন শেষ না হয় তত দিন এ শিশুদের থাকতে হবে রেডক্রিসেন্টের এ আশ্রয় শিবিরে। দিন গুনতে হবে কবে তারা আবার মিলিত হবে আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে।

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন