টপ পোষ্ট

দই বেচে শিক্ষার আলো ছড়ানো জিয়াউল হক পাচ্ছেন একুশে পদক

0

জিয়াউল হক; বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চামামুশরীভুজা গ্রামে। দই বেচে তিনি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গৌরব অর্জন করেছেন। ‘বেচি দই, কিনি বই’ — স্লোগানের রূপকার এ মানুষটি কেবল শিক্ষার আলো ছড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন সমাজসেবায়। চরম দরিদ্রতাকে জয় করে পথচলা জিয়াউল একুশে পদক-২০২৪-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জিয়াউল হক পাচ্ছেন এ পদক!
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আইরীন ফারজানের স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। জিয়াউল হক ছাড়াও দেশের আরও বিশিষ্ট ২০ ব্যক্তি একুশে পদক পাচ্ছেন।

এর আগে, ২০২০ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক পেয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতী সন্তান প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ভাষা সৈনিক আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তার।

জানা গেছে, জিয়াউল হক লেখাপড়া করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। পরিবারের অভাব ঘুচাতে স্কুলের পথ আর মাড়ানো হয়নি। নেমে পড়েন দুধ বিক্রিতে। কিন্তু মনের মধ্যে স্কুলে না যাওয়ার আক্ষেপটা থেকেই যায়। আর তাইতো পরিশ্রমের মজুরি থেকে এলাকার গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বইসহ অন্যান্য উপকরণ কিনে দিতেন। এভাবে শিক্ষার আলো ছড়ানো শুরু করেন মানুষটি। গড়ে তোলেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’।

মরহুম তৈয়ব আলী মোল্লা ও শরীফুন নেসা দম্পতির ছেলে জিয়াউল হকের জন্ম ১৯৩৮ সালে। দুধ বিক্রির পাশাপাশি দইয়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। দইয়ের ব্যবসায় লাভ বেশি হওয়ায় প্রতিদিনের পরিবারের খরচ মিটিয়ে বাকি অর্থ দিয়ে নেমে পড়েন সমাজসেবায়। প্রতিদিন দই মাথায় নিয়ে সাইকেলে করে বিক্রি করেছেন গ্রামে-গঞ্জে। তার তৈরি দইয়ের নামডাকও দেশজুড়ে। আর দই বিক্রির টাকা থেকে কিনতেন দু-একটি বই অথবা পত্রপত্রিকা। আর এভাবেই ১৯৬৯ সাল থেকে তিল তিল করে গড়ে তোলেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’।

শুরুর দিকে অভাবগ্রস্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিতেন। বর্ষ শেষে আবার ফেরত নিয়ে আসতেন। পরবর্তীতে স্থানীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় পাঠ্যবই, পবিত্র কোরআন মাজিদ ও এতিমদের পোশাক, শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রাখেন। পবিত্র ঈদে দুস্থদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেন। এ ছাড়া গ্রামের বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষকে টিনের ঘরও তৈরি করে দেন। এতিমখানায় পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির খাসি কিনে দেন। এভাবেই তিনি সমাজসেবা করে আসছেন।

আপাদমস্তক সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জিয়াউল হকের পাঠাগারে ২০ হাজারের বেশি বই আছে। দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তি ও সংস্থা তাকে বই ও সেলফ দিয়ে সহায়তা করেছেন। শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী জিয়াউল হক তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননাও পেয়েছেন।

এ দিকে, জিয়াউল হকের একুশে পদক প্রাপ্তিতে আনন্দে ভাসছে ভোলাহাটসহ পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। তাকে অনেকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদকের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমি যোগাযোগ করি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ কে এম গালীভ খানের সঙ্গে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যাই।

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন ইউএনও আমার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের ২১শে পদকের জন্য আমার নাম ঘোষণা করা হয়।

এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)। শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে ১১ জন পাচ্ছেন এই পদক। সংগীতে পাচ্ছেন জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। অভিনয়ে ডলি জহর ও এমএ আলমগীর, আবৃতিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী, নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ এবং চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ এ পুরস্কার পাচ্ছেন।

এ ছাড়া ভাষা ও সাহিত্যে এবার একুশে পদক পাচ্ছেন চারজন। তারা হলেন: মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর)। শিক্ষায় প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষুও রয়েছেন এ তালিকায়।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.