টপ পোষ্ট

বসন্ত এসে গেছে…

0

আজ পয়লা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। কোকিলের কুহুতানে শ্যামলিমার জেগে ওঠার দিন। জবুথবু শীতের আষ্টেপৃষ্ঠে বন্ধন থেকে জীর্ণতা সরিয়ে প্রকৃতির ফুলে ফুলে সেজে ওঠার দিন। পরাণ হু-হু করা বসন্তের হাওয়া প্রকৃতিতে দোলা দিয়েছে। চারদিকে চোখ মেলে তাকালেই বুঝতে কষ্ট হয় না যে,হৃদয় রাঙানিয়া বসন্ত এসে গেছে…। বসন্ত মানে সজীবতা, বসন্ত মানে প্রাণের টান। জীবনের ধূসরতা একটু আড়াল করে পুষ্পের ন্যায় প্রস্ফুটিত হওয়ার নাম বসন্ত। বসন্ত মানে প্রেম, বসন্ত মানে উদাস হাওয়া।

ফাগুন এসে কানে কানে বলে-
আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিলো নেশা
কারা যে ডাকিলো পিছে!
বসন্ত এসে গেছে…

গণমানুষের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’। আগুন রাঙা ফাগুনের প্রথম দিনেই মানুষে মানুষে ভালোবাসার আবির ছড়িয়ে দিতে আজ প্রভাতে এলো বসন্ত। প্রকৃতিতে আজ ফুল ফুটবার চুক্তি থাকলেও চারদিকে আজ বসন্তের ঐকতান শুনা যায়। গাছে গাছে ফুল ফুটে আছে, শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া লালে চেয়ে গেছে। বাদ যায়নি শহর ঢাকাও। বাঙালি জীবনের সকল আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়েছে বসন্তের ঋতুতে।

১. প্রকৃতিতে বসন্তের বার্তা-
বসন্ত যে শুধু মনে আর প্রকৃতিতে দোলা দেয় তা নয়, বাঙালি জাগ্রত হয়েছে এই ঋতুতে। তাই এর রয়েছে বিশেষ মাহাত্ন। বসন্ত মানে পূর্ণতা, বসন্ত মানে নতুন কলরব, ফুলের বুকে প্রজাপতির মধু খাওয়ার লুটতরাজ। বসন্ত সাজে কি অপরুপ চারপাশ। বসন্তে আগুন সাজে প্রকৃতিকন্যা, পৃথিবীর সব ফুল তার অনুষঙ্গ। এ যেন ফুলেল সময়! প্রকৃতিতে শিমূল-পলাশ-কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল সাজ। তরুণীদের ফুলসজ্জার রাজসিক চাল বলে দেয়, এ যেন প্রেমের সময়! আবার বসন্ত মানে ঝরা পাতার হাহাকার, শূন্য গাছের বিষণ্ণতা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছেন :
বসন্তে কি শুধু কেবল ফোটা ফুলের মেলা রে।
দেখিস নে কি শুক্‌নো-পাতা ঝরা-ফুলের খেলা রে।

আবার বসন্ত মানেই দ্রোহ, খুন রাঙা বিক্ষোভ। বসন্ত মানে অধিকার, বসন্তেই যে ভাষার আন্দোলন! ভাই হারানোর শোক সন্তানহারা মায়ের চোখের জল। ফাগুন হাওয়ার দিনে চিরসৌন্দর্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য উৎসব হয়ে উঠা বসন্ত ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় জানান দিচ্ছে নতুন দিনের বার্তা।

বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। মিলনের ঋতু বসন্তই মনকে সাজায় বাসন্তী রঙে, মানুষকে করে জীর্ণতা সরিয়ে নতুন শুরুর প্রেরণা। বসন্ত কচিপাতায় আনে নতুন রঙ, দেখা যায় পাতায় পাতায় আলোর নাচন। তাই তো সবুজ পত্রপল্লবের আবডালে লুকিয়ে বসন্তের দূত কোকিল শোনায় কুহুকুহু ডাক। আর এই ডাকে ব্যাকুল হয় উদাসি মন।

২. মানব মনে বসন্ত-
সাহিত্যে-প্রেম আর মিলনের ঋতু বলেও বসন্ত সুপরিচিতি রয়েছে। বসন্ত দিনে রাঙা মনের সৌন্দর্য ফুটে উঠে পোশাকেও, থাকে ফাগুনের আগুন ঝরানো রং। বসন্তের বাতাস যেমন প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলে। তেমনি বসন্তের আগমনী গানে পুরো বাংলাদেশ যেন আটপৌরের আগল ভেঙে বসন্তের আহ্বানে জেগে ওঠে। তরুণীদের পরনে শোভা পায় বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় উঠে বাসন্তী ফুল। গালে বসন্তের মনকাড়া আল্পনা। তরুণদের বসনেও বাসন্তী ছোঁয়া। বাদ যায় না শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধরাও। সবার মন তাই গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে কবি গুরুর সেই বিখ্যাত গান- ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে/এত বাঁশি বাজে/ এত পাখি গায়…।’

৩ বিরহী বসন্ত-
বসন্ত যেমন উচ্ছ্বলতা, উচ্ছাস, তেমনি বসন্ত আবার বেদনা-হাহাকারেরও শব্দধ্বনি বাজায়। বসন্তে প্রকৃতি শুধু কোমল নয়, কঠোরও হয়। বসন্তই কখনো কখনো ডেকে আনে অকাল বৈশাখ, বৈশাখী ঝড়। তবু বসন্ত আরাধ্য, তাই বসন্তবন্দনা আমাদের প্রাণের গান।

আমার মনে আছে, বসন্তের বিদায় প্রকৃতির পথ ধরে স্মৃতি ময় শৈশব হারাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম বিদ্যাপীঠ আর তুখোড় সহপাঠীদের মোহময় সান্নিধ্য। গ্রায়ের মেঠো পথে বেড়ে উঠা এই আমি বসন্ত কে অনুভব করেছিলাম পরম বিরহে। বাল্যপ্রেম, শৈশব স্মৃতি সব রেখে এক বিরহী বসন্তে রেখে এসেছিলাম সাগর দুহিতা সন্দ্বীপে। শুকনো পাতার মর্মরে ভেঙ্গেছিল আমার সজিব হৃদয়। বসন্তে হারিয়েছিলাম এক জীবনের সুখ। তাই কবির মতো আমিও বসন্তে বিমর্ষ, প্রিয়হারা কার কান্নার ধ্বনি ঝরাপাতার আওয়াজে শুনতে পাই।

কলেজের গণ্ডিতে পা রাখলাম যখন সেবারই বাংলা প্রথমপত্রে বসন্তের সাথে আরেক দফা আলাপ হয়েছিল আমাদের। ‘তাহারেই পড়ে মনে’কবিতাটা পড়ে প্রথমবারের মতো একইসাথে আনন্দ এবং দুঃখের সাথে পরিচিত হয়ে মিশ্র অনুভূতিতে ভাসছিলাম। কবিতার লাইনগুলো এরকম- বসন্তে প্রিয়হারা কান্নার আওয়াজ’কবি সুফিয়া কামালের লেখায় উপলব্ধি করতে পারি। তাঁর অমর সৃষ্টি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”

কবিতায় কী আক্ষেপ! কী বেদনা! এত আকাঙ্ক্ষা আর কোন লেখনে বহুকাল পাওয়া হয়নি। মনে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল, বসন্ত মানে কি আসলেই এতটা রিক্ততা? উত্তর আর জানা হয়নি। তবে কি শুধু বিষাদই ছড়ায় বসন্ত? এ প্রশ্নে মনে পড়লো বসন্তের বিখ্যাত গানটি।

এই বসন্তে অনেক জন্ম আগে
তোমায় প্রথম দেখেছিলেম আমি
হেঁটেছিলেম নিরুদ্দেশের পানে
সেই বসন্ত এখন ভীষণ দামি
আমার কাছে, তোমার কাছে,
আমার কাছে, বসন্ত এসে গেছে…

আবার কী আনন্দ! প্রথম দেখার অপার সুখানুভূতি! এই অনুভূতি ভোলার নয়। এক জোড়া চোরা চাহুনির বিপরীতে এক জোড়া লাজুক দৃষ্টিই যেন কাঙ্ক্ষিত উত্তর। আর ভাগ্যের লিখনে মানুষটাকে যদি নিজের করে পাওয়া হয় তো বসন্তের আনন্দ দ্বিগুণ হতে কতক্ষণ? ভাঙনের সুর যেমন বাজে, মিলনের আবহও তো তেমনি তৈরি হয়। এ যেন প্রকৃতিরই আরেক খেলা। শীত যতটা কেড়ে নেয়, বসন্ত যেন ততটাই ফিরিয়ে দেয়। হওয়ারই তো কথা, প্রকৃতি যে সমতায় বিশ্বাসী।

৪. কবিতায় বসন্ত-
প্রেমের কবি হাসান হাফিজের, অপর জনমে হয়তো-
”ফুলের মরণ কোথায় লিখেছি কবে/খুব সম্ভব রমনীর ঐ খোপা হবে,
তার ঘন চুলে বাসা বেধেছিলো এক নদী/বিরহের স্রোত কুলো কুলো নিরবধি।
চেতনা হারায় সজ্ঞা হারিয়ে দেখা/সেই নদী চুল পার ভাঙ্গা প্রেম ,দুজনে আহত একা
দেখা হয় নাই এ জনমে আর/মিলন হবে না জানি ,মরে গেছে নদী
ছিড়ে গেছে মালা ,হোক যত কানাকানি/দুজন দু মেরু কোনো দিন ঐ ওরা ,ছুতে পারবে না হাত
গহীন খরণে জলে পুড়ে ছাই ,পোহাবে না কালো রাত/দু’জনা দুহুকে খুবই ভালোবেসে ,মেনে নেয় বিচ্ছেদ
অপর জনমে হবে মিলন ভেবে ভুলে যাই খেদ।

তুমি এলে ধরায় নিয়ে তোমার সৃষ্টি /মম চিত্তে আজি কে তাই জড়িছে সুখের বৃষ্টি/ পুস্পে পুস্পে সাজিয়ে ডালি, আসলে নও আঙ্গিনায়/ তব কুঞ্জের একটু কোণে/ নেবে কি গো আমায়?/ বর্ণ বাহার আল্পনাতে আঁকছি ছবি অবিরত, তাই তো তোমার নাম দিয়েছি ঋতুরাজ বসন্ত।

পাগল করা সুরে কোকিল কুহু কুহু গায়/ও গো ফাগুন তমারি দখিনা সমিরন জাগিয়াছে মোর তনু মনে রোমাঞ্চিত শিহরণ/পুলকিত যৌবন আনন্দে আজ হয়েছে আত্মহারা/ প্রেমিক হৃদয় প্রেমাকাঙ্খা তাই তো পাগল পারা/ পুস্পিত সৌরভে আজি গো দোলা জাগে মনে/ ব্যাকুল আঁখি কাহাকে জানি খোঁজে তাই ক্ষণে ক্ষণে।

বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, তাই পৃথিবীর সব জড়া-জীর্ণ মুছে যাক, নব্য মঞ্জুরিতে প্রকৃতি যেমন নতুন সম্ভার এনেছে, ঠিক তেমনি মানুষের জীবনে বসন্ত আশীর্বাদ হয়ে আসুক। বসন্ত প্রেমের ঋতু, প্রেম বসন্তকে পেয়ে বেশি উজ্জীবিত, তাঁর মানব মনে বসন্ত এলে যে কেউ গাইতে চাই, বলতে চাই, প্রকাশ করতে চাই হৃদয়ের অফার ঐশ্বর্যের কথা। বুকের ভেতর যে রোমাঞ্চিত যুমুনা না পাওয়ার বেদনায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়, সেখান থেকে বসন্ত জীবনের বার্তা দেয় নতুন করে সাজতে। বাংলার চপল মেয়েরা মাথায় ফুল দিয়ে সাজে, বাসন্তি শাড়িতে আঁচল তোলে। ফুলের সাথে রমনির যেন এক অফার মেলবন্ধন খুঁজে পাওয়া যায়। দুটো যখন সুন্দর হয়, ঠিক তখনি প্রেমিকের মনে এ ভূবনও সুন্দর হয়ে উঠে।

৫. গানে গানে বসন্ত-
এছাড়াও বসন্ত নিয়ে কবিতায় গানে মাতামাতি অনেক হয়েছে। চারদিকে বসন্ত বন্দনায় মুখর হয়ে উঠেছে। বাংলা গানে বসন্তের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
কবি গুরু আনমনে গেয়ে উঠেছেন- আহা আজি এ বসন্তে ,এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।অন্য কোন ঋতুর বেলায় তা ঘটেনি। এই সময়ের জনপ্রিয় গান-বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে/কে তুমি বাশরিয়া মধু ভরা বসন্তে বাঁশির ও সুরে পাগল করেছো/ এলো বসন্ত , আমার গানে কোকিল বলে এসো বন্ধু হয়ে যাই রে, ফাগুন এলো আমার মনে প্রেম আছে, প্রেমের পাখি নাই রে নীড়ে/ ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ বসন্ত বাতাসে সই গো ,বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে/ ফাগুন লেগেছে বনে বনে/ মধুর বসন্ত এসেছে, মধুরও মিলন ঘটাতে/জীবনে বসন্ত এসেছে / বহু গানে বসন্ত কে প্রেম নিবেদনের মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়েছে।

এছাড়াও এটি মিলন-বিরহ-বিচ্ছেদের ঋতু। এই ফাগুনি হাওয়া বড় বেশি কল্যাণকর, আর তাই হারানো সব স্মৃতিতে মানুষের বাস। আমার কাছে বসন্ত হলো আবেগের ঋতু,পুনজন্মের ঋতু। জীবনের সকল অর্জন- উপার্জন, ত্যাগ আর নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করার জন্য এই ঋতুর বিকল্প নাই। রোগ-ব্যাধি , হাসি আনন্দ অশ্রুতে সময়টা বড্ড মূল্যবান।

৬. আন্দোলন সংগ্রামে বসন্ত-

বসন্ত এই দেশের জন্মের সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাস, বিপ্লবের মাস এটি। কারণ ফেব্রুয়ারী এলে আমার প্রাণে অনুরণিত হয় মাতৃভাষার ব্যাপারটি। আর তাই বাঙ্গালির সংগ্রামের পিছনে এই মাসের,এই ঋতুর ভূমিকা অপরিহার্য। বসন্তের এই মাতাল হাওয়ার দিনে, ঝরা পাতার দিন শেষের এই লগ্নে, নব্যমঞ্জুরিকে আমরা যেমন স্বাগত জানাবো কোকিলের কুহু তান, তেমনি ভুলবো আমরা অতীতের সকল কালো দুঃখ।

বসন্ত মানেই ৮ ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারি। বসন্ত মানেই ‘মাথা নত না করা’, দুর্জয় সাহসে ভর। বসন্ত মানে স্বাধীনতা। একাত্তরের মার্চের উত্তাল দিন। বসন্ত মানে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়’। বসন্ত মানে শেখ মুজিবুর রহমান। বসন্ত মানে কেউ আমাদের ‘দাবায়ে’ রাখতে পারবে না। বসন্ত মানে ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো-ইনশাল্লাহ’। বসন্ত মানে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, একবার সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন:
বাংলাদেশের শহর গ্রামে চরে
ফাগুন মাসে রক্ত ঝরে পড়ে।
ফাগুন মাসে দুঃখী গোলাপ ফোটে
বুকের ভেতর শহিদ মিনার ওঠে।

৭. বসন্ত উৎসবের সূত্রপাত-
বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বসন্ত। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’হিসেবে। মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব।

৮. জাতীয় জীবনে বসন্তের প্রভাব-
বসন্ত শুধু বাঙালি জীবনে কেবল আনন্দের নয়। ফাগুনের শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রং মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নর শহীদদের কথা।
ফুল-ফাগুনের এই বসন্তেই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার। যাঁদের রক্তে আমরা পেয়েছিলাম প্রাণের ভাষা বাংলা।
ভাষা শহীদের স্মৃতিকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করে নতুনের আবাহনে তারুণ্য মেতে ওঠে বসন্ত উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে সেই তারুণ্যের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে শাহবাগ, রমনা বটমূল, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে রাজধানীজুড়ে; শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে নিভৃত পল্লীর ধুলোমাখা পথেও। প্রতিবছরই পৌষকে বিদায় দিয়ে পয়লা ফাল্গুনে বাসন্তী রঙে সাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ। চারুকলার বকুল তলায় আয়োজন করা হতো বসন্ত বরণের যত আয়োজন। এই উৎসব এখন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ।

৯. বসন্ত ও বইমেলা
রক্তের দামে যে অক্ষর আমাদের কেনা সে ভাষায় এখন হাজারো বই প্রকাশিত হয় অমর একুশে বইমেলায়। বাঙলা একাডেমির বইমেলা জুড়ে বর্ণমালার বসন্ত। নতুন প্রচ্ছদপটে রঙের নদী রাঙিয়ে দেয় লেখকের স্বপ্ন দিয়ে মোড়ানো বইগুলোতে। নানান পেশার মানুষের আনাগোনায় ভরে যায় সৌরওর্য়াদী উদ্যানসহ পুরো শাহবাগ। এদেশের মুক্তমনা মানুষের মনে বসন্ত ধরা দেয় ভিন্নভাবে। লেখক-পাঠকের মিলন মেলায় রূপ নেয় পুরো বাংলা একাডেমি। একইসঙ্গে মাস জুড়ে থাকে কবি সাহিত্যিকদের আড্ডা। এই বসন্তে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবাদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদক প্রদান করে থাকে।

আমরা দিন দিন হৃদয়হীন হচ্ছি, আর আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হচ্ছি। বাইরে ভালোবাসার রঙিন সাজ, ভেতরে হিংসার বাস। মানবিকতা কমছে, দানবিকতা বাড়ছে, আর বাড়ছে কপটতা। হৃদয়ে বিদ্বেষ-বিষ পুষে কী কাউকে ভালোবাসা যায়? এবারের বসন্ত প্রত্যেকের জীবনে বয়ে আনুক পরম আশির্বাদ, পূর্ণতা ও সুখ। বসন্ত বিরাজ করুক সবার মনে।

আমরা যদি পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করি,আর সমাজের অসঙ্গতিগুলি সবাই মিলে উপড়ে ফেলি তবে নিজেদের একটু প্রচেস্তার ফলে সবাই যেমন ভালো থাকবো ,ঠিক তেমনি দেশটাও একদিন সুন্দর হয়ে উঠবে। এই প্রাণ প্রাচুর্যের দেশে আমরা কি পারি না,আমাদের হৃদয়ের সবটা দিয়ে দেশটাকে ভালোবাসতে,কাজ করে গড়ে তুলতে। ভালোবাসা দিবস কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পালন করলে হবে না। সবার প্রতি সমান শ্রদ্ধা বোধ নিয়ে আগামির বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। তাহলেই কেবল স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে ।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.