টপ পোষ্ট

২৫ মাসেও অধরা তনুর খুনিরা

0

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ২৫ মাস পেরিয়ে গেলেও শনাক্ত হয়নি খুনিরা, নেই মামলার উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি। মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা ও ‍খুনিরা চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার ও কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা। তনুর পরিবারের দাবি, সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।

মেয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আবেদন জানাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে চান তনুর মা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলছেন, মামলার স্বার্থে অনেককে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুই-তিন মাসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শেষ হবে।

তনুর পরিবারের সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিন জন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা— তা নিয়েও বিস্তারিত কিছু জানায়নি সিআইডি।

সিআইডি জানিয়েছে, সিআইডির একটি দল সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে ঢাকা সেনানিবাসে তিন জনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই তিন জন তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

এদিকে, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকা সিআইডি কার্যালয়ে বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে দিনভর পুরানো বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করেন ঢাকা সিআইডির কর্মকর্তারা। তবে এখনও মামলার কোনও অগ্রগতি হয়নি।

সুজন কুমিল্লার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মায়মুনা আক্তার রুবী বলেন, তনুর মতো একটি প্রাণোচ্ছ্বল মেয়েকে হত্যা করা হলো। ২৫ মাসেও কোনও আসামি শনাক্ত করা হয়নি। আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি?

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, একটি সুরক্ষিত স্থানে তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২৫ মাসেও অপরাধীদের শনাক্তে সিআইডির ব্যর্থতাই প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষ কত অসহায়।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারীর পরিচয় বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।’

আনোয়ারা বেগম আরও বলেন, ‘মেয়ের শোকে তনুর বাবা অসুস্থ, হাঁটতে পারছেন না। এখন তিন মাসের ছুটিতে আছেন। মেয়ে থাকলে আমাদের দেখাশুনা করতে পারত। কিন্তু এখন কে দেখবে আমাদের? এদিকে তদন্তের নামে ২৫ মাস পার করেছে সিআইডি। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। এখন মেয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আবেদন জানাতে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মামলার স্বার্থে পুনরায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা মিশনে ছিলেন, তারা আসছেন। দুই-তিন মাসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।’

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন