টপ পোষ্ট

পেটানোর ভিডিও ভাইরাল, চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা রনির পদত্যাগ

0

এক কোচিং সেন্টারের পরিচালককে ‘চাঁদার জন্য’ মারধরের ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ের ইউনিএইড নামের ওই কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে তার কার্যালয়ে মারধরের একটি ভিডিও ঘুরছে ফেইসবুকে।

রাশেদ মিয়া বলছেন, ওই ঘটনার পর গত ১৩ এপ্রিল রনি ও তার সহযোগীরা ফের তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পাঁচলাইশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।

অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।”

অভিযোগে রনির সঙ্গে নোমান চৌধুরী রাকিব (২৪) নামে আরেক যুবকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে রাশেদ মিয়া বলেছেন, রনি এবং তার সহযোগীরা জিইসি মোড়ে তার কার্যালয়টি ব্যবহার করতেন। তাদের নিষেধ করায় রনি ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই কার্যালয়ে গিয়ে তাকে মারধর করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

ফেইসবুকে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, সিগারেট হাতে রনি ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে কথা বলার এক পর্যায়ে রাশেদ মিয়ার ওপর চড়াও হন; একের পর এক চড় মারতে থাকেন, মাঝে মাঝে রাশেদের চুল ধরে মারতে দেখা গেছে। মারধরের ঘটনাটি ওই কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

১৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে একটি ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ বললেও চাঁদা দাবির কথা অস্বীকার করেছেন রনি।
তার দাবি, ওই কোচিং সেন্টারে তার অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।

রাশেদ মিয়া অভিযোগে বলেছেন, দাবি করা চাঁদার টাকার জন্য গত ১৩ এপ্রিল রনি, নোমানসহ আরও কয়েকজন গত ১৩ এপ্রিল তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে আবারো মারধর করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওইদিন সুগন্ধার বাসা থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুর মাজার এলাকায় গেলে রনি, নোমানসহ আরও কয়েকজন মিলে তাকে মুরাদপুর বুড়িপুকুর পাড় অ্যালুমিনিয়াম গলিতে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে টাকা দাবি করে।

টাকা দিতে না পারায় তাকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয় এবং নোমান ও এক সহযোগীসহ রাশেদকে সুগন্ধার বাসায় পাঠিয়ে নগদ ৩৫ হাজার টাকা, তার ও স্ত্রীর পাসপোর্ট নিয়ে আসা হয়।

পরে তাকে আবার মোটরসাইকেলে করে নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের পশ্চিম গেইটে রেখে আসে বলে অভিয়োগ করেন রাশেদ।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগনেতা রনি পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, রাশেদের সঙ্গে মিলে তিনি ইউনিএইড নামের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করতেন।

রনির দাবি, চকবাজার থানার সাবেক ওসি আজিজ আহমেদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে রাশেদের বিরোধ হলে দু’টি চেকের মাধ্যমে তিনি রাশেদকে সাড়ে নয় লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন।

টাকার জন্য রাশেদের সঙ্গে তার বিরোধ না হলেও গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ইউনিএইড কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে এক শিক্ষককে কোচিং ক্লাস করাতে দেখেন। বিষয়টি তিনি রাশেদকে জানান।
পরিদন ১৭ ফেব্রুয়ারি রাশেদ ইউনিএইড কার্যালয়ে গিয়ে আমাকে ‘সেঙ্গুইন প্লাস’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষককে ভাড়া দেওয়ার কথা জানায়। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে ‘অপ্রীতিকর’ কিছু ঘটনা ঘটলেও নিজেরা আবার মীমাংসা করে ফেলেন বলেও রনি বিবৃতিতে দাবি করেন।

১৩ এপ্রিল রাশেদকে ধরে নিয়ে মারধর করার বিষয়ে রনির ভাষ্য, তার কাছ থেকে নেওয়া ধারের টাকা গত ১০ এপ্রিল রাশেদের ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। ১৩ এপ্রিল রাশেদ তার কাছে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা পরদিন দেওয়ার আশ্বাস দেন।

রনির অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে রাশেদ নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে বৃহস্পতিবার চকবাজার এলাকার যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া নুরুল মোস্তফা টিনুকে নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। পরে সেখান থেকে পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বিরোধের বিষয় নিয়ে কিছু রাজনীতিবিদ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে রনির অভিযোগ।

ঘটনার বিষয়ে জানতে রাতে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

বিবৃতিতে যা বলেছেন, সেটাই তার বক্তব্য বলে জানান তিনি।

রনির বিবৃতি

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগনেতা রনি পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, রাশেদের সঙ্গে মিলে তিনি ইউনিএইড নামের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করতেন।

রনির দাবি, চকবাজার থানার সাবেক ওসি আজিজ আহমেদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে রাশেদের বিরোধ হলে দু’টি চেকের মাধ্যমে তিনি রাশেদকে সাড়ে নয় লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন।

টাকার জন্য রাশেদের সঙ্গে তার বিরোধ না হলেও গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ইউনিএইড কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে এক শিক্ষককে কোচিং ক্লাস করাতে দেখেন। বিষয়টি তিনি রাশেদকে জানান।
পরিদন ১৭ ফেব্রুয়ারি রাশেদ ইউনিএইড কার্যালয়ে গিয়ে আমাকে ‘সেঙ্গুইন প্লাস’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষককে ভাড়া দেওয়ার কথা জানায়। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে ‘অপ্রীতিকর’ কিছু ঘটনা ঘটলেও নিজেরা আবার মীমাংসা করে ফেলেন বলেও রনি বিবৃতিতে দাবি করেন।

১৩ এপ্রিল রাশেদকে ধরে নিয়ে মারধর করার বিষয়ে রনির ভাষ্য, তার কাছ থেকে নেওয়া ধারের টাকা গত ১০ এপ্রিল রাশেদের ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। ১৩ এপ্রিল রাশেদ তার কাছে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা পরদিন দেওয়ার আশ্বাস দেন।

রনির অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে রাশেদ নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে বৃহস্পতিবার চকবাজার এলাকার যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া নুরুল মোস্তফা টিনুকে নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। পরে সেখান থেকে পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বিরোধের বিষয় নিয়ে কিছু রাজনীতিবিদ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে রনির অভিযোগ।

ঘটনার বিষয়ে জানতে রাতে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

বিবৃতিতে যা বলেছেন, সেটাই তার বক্তব্য বলে জানান তিনি।

সন্ধ্যায় পদত্যাগ

ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে সন্ধ্যায় সংগঠন থেকে পদত্যাগ করার বিষয়টি নিজের ফেইসবুক পেইজে জানান নুরুল আজিম রনি।

মহানগর ছাত্রলীগের প্যাডে লেখা অব্যাহতিপত্রটি রনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখেছেন।

অব্যাহতিপত্রে রনি উল্লেখ বলেছেন, “পিতা মুজিবুরের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম। একান্ত ব্যক্তিগত কারণে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
“এমতাবস্থায় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন এবং এ প্রেক্ষিতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আবেদন করছি।”

চিঠির শেষে রনি বলেন, “প্রাণের ছাত্রলীগ ভালো থেকো, স্বকীয়তা নিয়ে লড়াই করার সৎ সাহস রেখো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”

অব্যাহতির বিষয়ে জানতে রনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন সময়ে আলোচিত ছাত্রলীগনেতা নুরুল আজিম রনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গত কয়েক বছরে এইচএসসি ও এসএসসিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন রনি।

তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের কারণে নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ এএসসি ও এইচএসসিতে নেওয়া অতিরিক্ত ফি ফেরত দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধেও তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে আন্দোলন করে ছাত্রলীগ।

সম্প্রতি এইচএসসিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ ওঠা চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগে মামলা হয় রনির বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী, নাসিম আহমেদ সোহেল এবং সুদীপ্ত হত্যার পর সেসব ঘটনার বিচার দাবিতে সোচ্চার ছিল রনি ও তার অনুসারীরা।

২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাটহাজারীতে ভোট কেন্দ্রের বাইরে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত রনিকে দুই বছরের সাজা দেয়। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

সবশেষ গত বছর এম এ আজিজ আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণ প্রকল্পে নেতা মহিউদ্দিনকে অনুসরণ করে সিটি মেয়র নাছিরের বিরোধীতা করেন রনি।

 

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন