টপ পোষ্ট

নতুন রাষ্ট্রপতি হওয়ার খবরে পাবনায় আনন্দের জোয়ার

0

আওয়ামী লীগ মনোনীত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় এখন আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। আর কোনো প্রার্থী নেই, তাই বঙ্গভবনে যাচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই।

রোববার (১২ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন ছিল। এদিন সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার (সিইসি) দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ছিল।

এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে নির্বাচন কমিশনে ওবায়দুল কাদের-এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল যান। এসময় দলের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

নতুন রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন এই বিষয় নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। দেশের শীর্ষ এই পদের জন্য মিডিয়ায় অনেকেরই নাম আসলেও একেবারেই আলোচনার বাহিরে ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন এর নাম। যার কারণে দেশবাসীর কাছে আগ্রহের সীমা ছিল না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর নাম মনোনয়ন দেওয়ার পরে সারাদেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বাদ থাকেনি তাঁর নিজ জেলা শহর পাবনা। এখবরে জেলায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এসময় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ করেন সাধারণ মানুষ।

নতুন রাষ্ট্রপতির বাড়ি পাবনায় হওয়ার সুবাদে এই জেলার মানুষের মাঝে বাড়তি আনন্দ পরিলক্ষিত করা যায়। তারা জানান, দেশের শীর্ষ এই পদে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু মনোনীত হওয়ায় তারা গর্ব বোধ করেন এই কৃতি সন্তানের জন্য।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লালের নেতৃত্বে হয়েছে আনন্দ মিছিল। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে নেতা-কর্মী এবং সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় জনাব লাল হবু রাষ্ট্রপতির সাথে মোবাইলে সরাসরি কথা বলেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। চুপ্পুও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে দোয়া চান।

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী। কর্মজীবনে ছিলেন বিচারক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার। স্বাধীনতার স্বপক্ষে তিনি একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে তিন বছর কারাগারে কাটিয়েছেন তিনি।

১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ছাত্রজীবনে ছিলেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার পতাকার উত্তোলনকারী। অংশগ্রহণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে।

উল্লেখ্য, মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ একাধারে আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও বিচারক। ১৯৮২ সালে বিসিএস ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। কর্মজীবনে তিনি জেলা জজ, আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান।

২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি সবসময়ই আপোষহীন। এক পুত্র সন্তানের পিতা মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ। তার স্ত্রী অধ্যাপিকা ডঃ রেবেকা সুলতানা সাবেক যুগ্মসচিব।

আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে তিনিই হতে যাচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০১১ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন।

এদিকে এটা স্পষ্ট যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করবে, তিনিই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন।

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবক হতে হয় সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে না বলে আগেই জানিয়েছে। আর সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। যেহেতু অন্য কোনো দল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করার বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এবারও আওয়ামী লীগ যাকে মনোনীত করবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রোববার সকালে গণভবনে তিনি সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।

ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রার্থীর সংখ্যা একজনের বেশি না হলে তাকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর একাধিক প্রার্থী না থাকায় সংসদ অধিবেশন কক্ষে ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না।

২০১৮ সালেও একক বৈধ প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হয়েছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.