বাংলাদেশের উপকূলজুড়ে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। মিয়ানমার ও ভারত থেকে সমুদ্রসীমা উদ্ধারের পর সেসব অঞ্চলেও শিকার বাড়ছে সুস্বাদু মাছের। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটানেই জাল থেকে জাহাজে উঠানো হচ্ছে কোটি টাকা মূল্যের ৮০ টন মাছ।
কর্ণফুলী নদীর ঘাট থেকে মাত্র ১২৮ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার এলাকা হিসেবে পরিচিতি সবচেয়ে কাছের ‘ফিশিং গ্রাউন্ডে’ যায় বিভিন্ন সাইজের জাহাজ। ৪০ মিটারের বেশি গভীরতায় মাছ আহরণের প্রতিযোগিতা চলে কাঠ ও ইস্পাতের তৈরি ৫০ থেকে ৪০০ টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজের।
কন্টিনেন্টাল ফিশিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, “জাহাজের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং বড় সাইজের জাহাজগুলো চলছে। ১০ বছর আগে সব ছোট ছোট জাহাজ ছিল।”
চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. শরিফ উদ্দিন বলেন, “অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন অনবোট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই সমস্ত জাহাজ আমাদের বহরে সংযোজন করা দরকার।”
গভীর সমুদ্রের কোন এলাকায় মাছের ঝাঁক অর্থাৎ শিকারিদের ভাষায় ‘ফিশ স্কুল’ রয়েছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে সেটির অনুসন্ধান চলে প্রথমে। ক্যাপ্টেনের রুমে থাকা জিপিএস, ইকোসাউন্ডার ও সোনারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে শিকার খোঁজা হয়। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে মাছ ধরার আধুনিক জাহাজের সংখ্যা ১৫৮ থেকে বেড়ে এখন ২৬২টি। এখন এক টানেই জালে উঠে আসে কোটি টাকা মূল্যের ৮০ টন ইলিশ মাছ।
মাছ ধরা জাহাজের ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান বলেন, “ ৪ ঘণ্টার এক ট্রলে ৮০ টনের বেশি ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে কয়েকটি জাহাজে।”
বংশ বিস্তারের জন্য দুই দফায় তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখায় সরকারি বিধিনিষেধ বেশ ভালই সুফল পাচ্ছেন বলে জানালেন ২০ বছর ধরে মাছ আহরণকারী এই জাহাজ মালিক।
আহসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, “সরকার বিশেষ করে ইলিশের ক্ষেত্রে হাইলি সাকসেসফুল। প্রথম দিকে সমস্যা হলেও আমরা এখন তার সুফল পাচ্ছি।”
গবেষকরা জানান, জলজ এই প্রাণী খাবারের সন্ধানে পরিভ্রমণ করতে থাকে সমুদ্রজুড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. রাশেদ উন নবী বলেন, “মাছ প্রজনন ছাড়াও অনেক সময় খাবারের জন্য পরিভ্রমণ করে থাকে। যেখানে বেশি পরিমাণ নিউট্রেশন, নিউট্রিয়ন থাকবে মাছ সে দিকে যাবে।”
জরিপ ও ডিম ছাড়ার সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখা একই সঙ্গে সরকারি বিধি-নিষেধ সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি হলে অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র হবে বঙ্গোপসাগরের এই প্রাকৃতিক সম্পদ।