টপ পোষ্ট

কনটেইনারে লুকিয়ে ব্রিটেনে ঢোকার অভিজ্ঞতা জানালেন জাওয়াদ আমিরি

0

একটি লরির পেছনে কনটেইনারের ভেতর ঠান্ডায় জমে গিয়ে ৩৯ জন চীনার করুণ মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে ব্রিটেনে। যে কনটেইনারে লুকিয়ে এরা ব্রিটেনে আসার চেষ্টা করেছিলেন, সেটিতে সাধারণত হিমায়িত অবস্থায় খাদ্য পরিবহন করা হয়।

অবৈধ অভিবাসীরা নানাভাবে ইউরোপের মূল ভূখন্ড থেকে ব্রিটেনে আসার চেষ্টা করে। এরমধ্যে ট্রাকের পেছনে বা পণ্যবাহী কনটেইনারের ভেতর লুকিয়ে আসার ঘটনাই বেশি। এই কাজ করতে গিয়ে আগেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে ট্রাক বা কনটেইনারের ভেতর। ঠান্ডায় জমে বা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে তাদের অনেকে।

ইংল্যাণ্ডের এসেক্সে ৩৯ জনের দেহ একটি কনটেইনারের ভেতর খুঁজে পাওয়ার ঘটনা জাওয়াদ আমিরিকে মনে করিয়ে দিয়েছে তার নিজের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। তিনিও একই ভাবে ব্রিটেনে এসেছিলেন, এবং সেই যাত্রায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রায় মারাই যাচ্ছিলেন। জাওয়াদ আমিরির ভাষায়, তারা যেন একটি ‘চলন্ত কবরের’ মধ্যে ছিলেন।

২৮ বছর বয়সী জাওয়াদ আমিরি এসেছেন আফগানিস্তান থেকে। ফ্রান্সের উপকূলে ক্যালে বন্দর থেকে একটি কনটেইনারের ভেতর লুকিয়ে তিনি ব্রিটেন ঢোকেন। তারা ছিলেন মোট পনের জন অভিবাসীর একটি দল।

কনটেইনারটি ছিল সীল-গালা করা। ব্রিটেনের এম-ওয়ান মোটরওয়ে দিয়ে যখন এই কনটেইনারটি নিয়ে লরিটি যাচ্ছিল, তখন ভেতরে অক্সিজেনের স্বল্পতায় সবাই মরতে বসেছিলেন। জাওয়াদ আমিরির সাত বছর বয়সী এক ভাইয়ের টেক্সট মেসেজ তাদের সবার জীবন বাঁচায়। জাওয়াদ বর্ণনা করেছেন সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতাঃ

“প্রতি রাতে মানুষ পাচারকারী দলের লোকজন একটি লরি নিয়ে আসতো। সেটির পেছনে তারা বিশ হতে তিরিশ জন পর্যন্ত অভিবাসীকে তুলতো। প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা টাকা নিত। আপনি বাঁচলেন না মরলেন, সেটা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই।”

“আমি এবং আমার সাত বছরের ছোটভাই আহমদ একটি রেফ্রিজারেটেড লরির পেছনে উঠি। আমাদের সঙ্গে আরও ১৩ জন। আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ওরা লরির দরোজা বন্ধ করে দিল। সবাই তখন ভীষণ ভয়ে আর আতংকে। কারণ ভেতর থেকে দরোজা খোলার কোন উপায় আর নেই।”

“লরির ভেতরে ছিল অনেক ওষুধের বাক্স। দুই সারি ওষুধের বাক্সের মাঝখানে একটুখানি জায়গা, বড়জোর আধা মিটার। সেখানে আমাদের প্রায় ১৫/১৬ ঘন্টা ধরে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। আমাদের নড়াচড়ার কোন জায়গা ছিল না। বসার উপায় নেই, দাঁড়ানোর উপায় নেই। মনে হচ্ছিল আমরা যেন একটা চলন্ত কবরের মধ্যে শুয়ে আছি।”

“ভেতরে ছিল পুরোপুরি অন্ধকার। শুরুতে বেশ ঠান্ডা ছিল। কারণ এটি একটি রেফ্রিজারেটেড কনটেইনার। কিন্তু এরপর এয়ারকন্ডিশনিং আর কাজ করছিল না, এটি বিকল হয়ে গিয়েছিল। এরপর ভেতরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলো।”

“আমরা আমাদের কম্বল সরিয়ে নিলাম, কাপড়-চোপড় খুলে ফেললাম। আমাদের সাথে কেবল অল্প পানি ছিল। তারপর পানিও ফুরিয়ে গেল। আমাদের টয়লেটে যাওয়ারও কোন উপায় নেই।”

“ভেতরে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমার ভাই কাঁদছিল। ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল আর কাশছিল। আমি ওকে বলে যাচ্ছিলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে, ওরা দরোজা খুলে দেবে। আমরা ঘামছিলাম।

“কনটেইনারের ভেতরটা আরও গরম হয়ে উঠছিল। আমরা কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলাম না। আমরা চিৎকার করে ড্রাইভারকে ডাকছিলাম, দরোজায় ধাক্কা দিচ্ছিলাম।”

“ড্রাইভার অনেক বার থেমেছিল। আমরা আশা করছিলাম যে ও দরোজা খুলবে। কিন্তু ও দরোজা খুলতে চায়নি। খুব খারাপ ভাষায় ও আমাদের গালাগালি দিচ্ছিল এবং আমাদের চুপ থাকতে বলছিল চিৎকার করে।”

সূত্র-বিবিসি

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন