ভারতের প্রমোদতরী ‘গঙ্গা বিলাস’। সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে এই প্রমোদতরীর উদ্বোধন করেন। যা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদী ঘুরে মোট ৫১ দিনে আসামের ডিব্রুগড়ে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু যাত্রার তৃতীয় দিনেই বিহারের ছাপরায় গঙ্গা নদীতে আটকে গেছে বহুল প্রত্যাশিত প্রমোদতরীটি।
ভারতের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া এ তথ্য জানায়।
তারা জানায়, বিহারের ছাপরা জেলার ডরিগঞ্জ এলাকার কাছে গঙ্গায় পানির নাব্যতা কমে যাওয়ায় প্রমোদতরীটি আটকে গেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে ব্যয়বহুল এই যাত্রায় পূর্বে থেকে কেনো পরীক্ষণ চালানো হয়েছিল কিনা যে, এই যাত্রায় কোন বাধা আসতে পারেকিনা?
জানা গেছে, পর্যটকদের ছাপরা থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে ডরিগঞ্জ বাজারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ‘চিরন্দ সরণ’ দেখানোর জন্য প্রমোদতরীটির তীরে ভেড়ার কথা ছিল। কিন্তু নদীতে নাব্যতা কম থাকায় নৌযানটি তীরে ভিড়তে পারেনি।
যদিও পরে, এসডিআরএফ দল একটি ছোট নৌকার মাধ্যমে পর্যটকদের তীরে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। যেন তারা ‘চিরন্দ সরণ’ দেখতে পারেন।
প্রমোদতরীর এ খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই হইচই শুরু হয়ে যায়। কারণ পুরো যাত্রাপথে যে ভাড়া ঠিক করা হয়েছে তা বিপুল পরিমানের। ফলে এনিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়ে যায়।
ওই খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এনডিআরএফের টিম। তরীর যাত্রীদের ছোট নৌকোয় চাপিয়ে তীরে আনা হয়। এমনই খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আদৌ কী গঙ্গার অগভীর পানিতে আটকে গিয়েছিল প্রমদতরীটি? নাকি শুধুই রটনা? সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর ছাপরায় দর্শনীয় স্থান চিরান্দে যাওয়ার কথা ছিল যাত্রীদের। তাই তরীটিতে পাড়ের দিকে আনা হচ্ছিল। সেই সময় অগভীর পানিতে সেটি আটকে যায়। তবে বিষয়টি একেবারেই গুরুতর নয়।
পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ক্রুজটি তার সফরসূচি অনুযায়ী চলবে। এনিয়ে কোনও সমস্যা নেই। যে খবর রটানো হচ্ছে তা সত্যি নয়।
অন্যদিকে, ছাপরায় ওই প্রমোদতরীর যাত্রীদের চিরান্দে দেখানোর দায়িত্বে রয়েছেন সত্যেন্দ্র সিং। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, গঙ্গার ঘাটে এনডিআরএফের টিম ছিল। যাতে কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। গঙ্গায় জল কম থাকায় গঙ্গা বিলাসকে তীরে আনতে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু যাত্রীদের ছোট বোটে চাপিয়ে তীরে আনা হয়।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি প্রমোদতরীটির সুন্দরবন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা রয়েছে। উজানে প্রতি ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার এবং ভাটিতে প্রতিঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে চলে ‘গঙ্গা বিলাস’। ছয় দিনে বাংলাদেশের জলপথ পাড়ি দেবে এটি।
‘গঙ্গা বিলাস’ এর যাত্রীরা যাত্রা পথে অন্তত ৫০টি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।
প্রটোকল রুট ধরে এই নৌযান চলাচলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত। সেদেশের সরকারের উদ্যোগে এটি চালু হলেও পরিচালনার দায়িত্বে আছে ‘অন্তরা লাক্সারি রিভার ক্রুজেস’।
এতে জন প্রতি একদিনের টিকেটের দাম পড়বে ২৪ হাজার ৬৯২ রুপি; যাত্রাপথের মোট ৫১ দিনের ভাড়া ১২ লাখ ৫৯ হাজার রুপি। তবে আলাদা আলাদা প্যাকেজেও পর্যটকরা এই তরীতে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন।
বিলাসবহুল এই প্রমোদতরীতে মোট ৮০ জন যাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে গানবাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন। সেই সঙ্গে থাকছে শরীরচর্চা আর রূপচর্চার কেন্দ্রও।
এতে রয়েছে অত্যাধুনিক স্পা, জিম, লাইব্রেরি, বিনোদনের বন্দোবস্ত এবং দেশ-বিদেশের খাওয়া। প্রমোদতরীতে বিশাল বড় রেস্তোরাঁ ও সানডেক আছে। মেন ডেকে আছে ৪০ আসনের রেস্তোরাঁ। সেখান থেকে ইন্ডিয়ান এবং কন্টিনেন্টাল খাবার দেওয়া হবে। রয়েছে রিয়েল টিক স্টিমার চেয়ার এবং কফি টেবিল। যা যাত্রীদের অভাবনীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। ক্রুজে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকছে, যাতে গঙ্গা দূষিত না হয়।
দীর্ঘতম নদী যাত্রায় প্রমোদতরীটি ভারত-বাংলাদেশের ২৭টি নদীর উপর দিয়ে যাবে।