টপ পোষ্ট

ও আমার চাকর ও কেন বসব!

0

রাজধানীর কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির পেছনে ১৫ তলা একটি ভবনের দশম তলার বারান্দার বাইরে ঝুলে আছে এক কিশোরী। এঘটনা দেখতে ভবনটির নিচে ভির জমায় পথচারীরা। তারা চিৎকার করছে মেয়েটিকে এভাবে ঝুলে থাকতে দেখে। একটু-ওদিক হলেই নির্ঘাত মৃত্যু। বারান্দায় একটু পরপর এক নারী আসা–যাওয়া করছেন। তার নাম জানা গেল লাভলী রহমান। একপর্যায়ে তিনি বারান্দা থেকে বের হওয়ার গ্রিলের তালা খুলে মেয়েটিকে ভেতরে নেন।  

মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকের এ ঘটনা পুলিশের কানে পৌঁছলে সেখানে এসে হাজির হন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ।  

ঘটনার পর সার্কিট হাউস রোডের অ্যাপার্টমেন্ট ‘গাউছিয়া ডাইনেস্টি’ ভবনের দশম তলার (লিফটের ৯) ‘বি-১০’ নম্বর ফ্ল্যাটে যান জহিরুল ইসলামসহ পুলিশ সদস্যরা।

ফ্ল্যাটের বাইরে পাথরের নামফলকে এম হাবিবুর রহমান ও লাভলী রহমানের নাম লেখা। লাভলী রহমানই দরজা খুললেন। ইনিই সেই মহিলা, যিনি কিছুক্ষণ আগে বারান্দায় আসা-যাওয়া করছিলেন। লাভলী রহমান ও রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম পূর্বপরিচিত। দুজনই দুজনকে দেখে কুশল বিনিময় করলেন। লাভলী রহমান নিজেকে মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।

পুলিশ কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ফ্ল্যাটের বারান্দায় ঝুলে থাকা মেয়েটির বিষয়ে জানতে চাইলে লাভলী রহমান বললেন, যে মেয়েটি ঝুলে ছিল তার নাম খাদিজা। খাদিজা ও হেলেনা তার দুই গৃহকর্মী। দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং ঝগড়ার একপর্যায়ে খাদিজা বারান্দার বেষ্টনীর ফোকর গলে বাইরে ঝুলে থাকে। লাভলী সবার সামনেই খাদিজাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।

লাভলী একসময় আবু বকর নামের এক ব্যক্তিকে ফোন করেন এবং বলেন আগামীকাল বুধবারের মধ্যেই যেন তিনি এসে খাদিজাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। লাভলী জানান, আবু বকর খাদিজার মামা এবং তিনিই এক বছর আগে খাদিজাকে লাভলীর কাছে রেখে যান। খাদিজার বাড়ি সিলেটে।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম এবার খাদিজাকে ডেকে আনতে লাভলী রহমানকে অনুরোধ করেন। প্রথমে তিনি খাদিজাকে আনতে রাজি হননি। কয়েকবার অনুরোধের পর তিনি খাদিজাকে ডাকেন। তবে খাদিজা আসে না। তারপর জহিরুল ইসলাম নিজেই উঠে গিয়ে খাদিজাকে বসার ঘরে নিয়ে আসেন। খাদিজার বয়স ১৪ কি ১৫ বছর হবে। 
খাদিজাকে সোফায় বসতে বললে লাভলী রহমান বাধা দিয়ে বলেন, ‘ও আমার চাকর ও কেন বসব! ও দাঁড়িয়েই থাকব।’ খাদিজা মাথা নত করে দাঁড়িয়েই থাকল। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লাভলীকে অন্য ঘরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।

লাভলী চলে যাওয়ার পর তিনি খাদিজার কাছে জানতে চাইলেন, কেন এমনটি করেছে। কিন্তু খাদিজা কোনো জবাব দিল না। বারবার প্রশ্ন করেও তার মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের করা গেল না। পরে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো কেউ তাকে মারধর করে কিনা। সে মাথা নেড়ে জানাল, কেউ তাকে মারে না। কিন্তু জানা গেল না, কেন সে বারান্দার বাইরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুলে ছিল।

বের হওয়ার সময় লাভলী পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলামকে জানালেন, তিনি খাদিজার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করবেন।

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন