ঐতিহাসিক লর্ডসে গত জুলাইয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের
মত বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন বেন স্টোকস। একইভাবে এবার তিনি হাজির হলেন লিডসে।
ব্যাট হাতে স্টোকসের বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারিয়ে অ্যাশেজে
সমতা ফিরলো ইংলিশরা। সেইসঙ্গে ১৩১ বছর পর লিখলো নতুন এক ইতিহাস।
৩৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আগের দিন জো ডেনলিকে নিয়ে ১২৬ রানে জুটি
গড়ে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে রাখেন জো রুট। কিন্তু ডেনলি আউট হলে বেন স্টোকসের সঙ্গে রোববার
সকালে দাঁত কামড়ে ক্রিজে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। রান নেওয়ার তাড়া ছিল না কারও মনে। বরং
যতক্ষণ সম্ভব টিকে থাকাই ছিল দুই ব্যাটসম্যানের মূল লক্ষ্য।
কিন্তু ১৮ ওভার টিকে থেকে তুমুল প্রতিরোধ গড়া ১৮ রানের এ জুটি ভেঙে দেন নাথান
লায়ন। মাত্র দুটি রান যোগ করে ২০৫ বলে ৭ চারে সাজানো তার ৭৭ রানের ইনিংস থামে ডেভিড
ওয়ার্নারের তালুবন্দি হয়ে।
অধিনায়ককে হারালেও দলের জয়ের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখেন স্টোকস আর জনি বেয়ারস্টো।
তাদের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি তিন অঙ্কে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। ৩৬ রানে জোশ হ্যাজেলউডের বলে
মার্নাস ল্যাবুশ্যানের ক্যাচ হন বেয়ারস্টো।
এরপর ৮ রানের ব্যবধানে জস বাটলার (১) ও ক্রিস ওকসকে (১) দ্রুত হারিয়ে অনেকটা
পরাজয়ের শঙ্কা জেগে ওঠে ইংলিশ শিবিরে। মিডউইকেট থেকে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত থ্রোতে
রান আউট হন বাটলার। আর হ্যাজেলউডের বলে শর্ট এক্সট্রা কভারে ম্যাথু ওয়েডের হাতে ধরা
পড়েন ওকস।
তবুও ২৬১ রানে ৭ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এক বেন স্টোকস।
১৫২ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ফিফটি হাঁকানো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দলকে লড়াইয়ে রাখেন জোফরা
আর্চারকে সঙ্গে নিয়েই। লায়নের ৩৫তম ওভারে পরপর দুটি চার মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন আর্চার।
কিন্তু তিন বল পর তার স্লগ সুইপ ডিপ স্কয়ার লেগে হেডের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হয়। বল
হাতে নিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পা পড়ার আগেই ঠাণ্ডা মাথায় সামনে ছুড়ে দেন এবং আবার মাঠে
ঢুকে ক্যাচ নেন হেড।
৩৩ বলে ৩ চারে আর্চারের ১৫ রানের ইনিংস থামার পর মাঠে নামেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
কিন্তু দুই বল খেলে জেমস প্যাটিনসনের কাছে এলবিডাব্লিউ হন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে
পারেননি ব্রড। ফলে শেষ সম্বল লিচকে নিয়ে এক অসম্ভব লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন স্টোকস। যাতে
জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল সফরকারী অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু হাল ছাড়েননি বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচসেরা বেন স্টোকস। লিচকে কম স্ট্রাইক
দিয়ে কিউই বংশোদ্ভূত স্টোকস খেলেছেন বেশ মারমুখী হয়ে। মাত্র ৬.১ ওভারে পঞ্চাশ পেরোই
এই জুটি, যার মধ্যে কোনও রানই ছিল না লিচের।
এক পর্যায়ে হ্যাজেলউডকে চার মেরে অষ্টম সেঞ্চুরির দেখা পান স্টোকস। ১৮৮ বলে
৮ চার ও ৫ ছয়ের মার মারেন তখন। পরের দুই বলে টানা দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের উত্তেজনা
চরমে তোলেন এই বাঁহাতি। জ্যাক লিচের সঙ্গে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইংল্যান্ডকে
অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন স্টোকস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস:
১৭৯
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস:
৬৭
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস:
২৪৬
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস:(লক্ষ্য ৩৫৯,
আগের দিন
১৫৬/৩)
১২৫.৪
ওভারে ৩৬২/৯ (রুট
৭৭, স্টোকস
১৩৫*, বেয়ারস্টো
৩৬, বাটলার
১, ওকস
১, আর্চার
১৫, ব্রড
০, লিচ
১*; কামিন্স
২৪.৪-৫-৮০-১, হেইজেলউড
৩১-১-৮৫-৪,
লায়ন ৩৯-৫-১১৪-২, প্যাটিনসন
২৫-৯-৪৭-১,
লাবুশেন ৬-০-১৬-০)।
ফল: ইংল্যান্ড ১
উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ
সিরিজের তিনটি
শেষে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা
ম্যাচ: বেন
স্টোকস