![](https://topbanglanews.com/wp-content/uploads/2019/08/rohinga-700x420.jpg)
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর
হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মুখে মাতৃভূমি রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর
বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে।
এ সময়ের মধ্যে
দুবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাদের অনীহার কারণে তা বাস্তবায়ন
করা যায়নি। ফলে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
এ অবস্থার মধ্যেই
আজকের দিনটিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দারা মিয়ানমারের সেনা
নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং দায়ীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। কক্সবাজারের
উখিয়া উপজেলার ২২টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ডি-৪ নামক স্থানে জমায়েত করার উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং ‘ভয়েস অব রোহিঙ্গা’ সংগঠনের নেতা মাস্টার
নুরুল কবির।
রোহিঙ্গা নেতা
বলেন, ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে
রোহিঙ্গারা নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। দিবসটি পালন উপলক্ষে এরই মধ্যে প্রতিটি
ক্যাম্প কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ক্যাম্পে ক্যাম্পে ব্যানার, ফেস্টুন বিতরণ
করা হয়েছে। তারা সুশৃঙ্খলভাবে দিনটি পালন করবে।
২০১৭ সালের ২৫
আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে
মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত
লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।
এর আগে থেকেই
বাংলাদেশে আরো প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি শিবিরে
এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১
লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের
জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য
বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু দুবার উদ্যোগ
নিয়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসনের জন্য দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু কোনো রোহিঙ্গাই যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ
দেখায়নি। এর আগে ১৫ নভেম্বরও একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেবারও রোহিঙ্গারা
জানায়, তারা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।
২২ আগস্টের প্রত্যাবাসনকে
কেন্দ্র করে মিয়ানমার থেকে ছাড়পত্র পাওয়া তিন হাজার ৪৫০ জনের মধ্যে প্রায় তিনশজনের
সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ
ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের দপ্তর।
পরে শরণার্থী
ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কেউ
মিয়ানমারে ফিরতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। তবে যদি কোনো রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায়
মিয়ানমার ফিরতে রাজি হন, তাঁদের প্রত্যাবাসন করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
ফিরতে না চাওয়ার
ব্যাপারে টেকনাফের শালবন ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত আবুল কাশেম বলেন, ‘মিয়ানমারের
নাগরিকত্ব, নিজের বসতবাড়ি ফেরতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই কেবল আমরা মিয়ানমারে ফিরে
যাব। অন্যথায় যাব না।’
একই ক্যাম্পে
বসবাসরত আমির হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘আমাদের ছয় দফা দাবি না মানলে আমরা ফেরত যাব
না।’