বাংলাদেশে
এখন যে এগারো লাখেরও
বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে, তার বড়
অংশই বাংলাদেশে প্রবেশ করা শুরু
করেছিলো ২০১৭ সালের ২৫শে
অগাস্ট।
এরপর জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার নানা
উদ্যোগের পর বাংলাদেশ ও
মিয়ানমারের সরকারের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০১৮
সালের ২৩শে জানুয়ারি প্রত্যাবাসন
শুরুর কথা থাকলেও শেষ
পর্যন্ত তা আর হয়নি।
বরং রোহিঙ্গারা তখন আট দফা
দাবি তুলেছিলো প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসেবে।
এর মধ্যে ছিলো – নাগরিকত্ব,
নিরাপত্তা, বাড়িঘর জমি ফেরত পাবার
নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো।
এসব দাবি নিয়ে তখন
বিক্ষোভ করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস
সোসাইটি নামের একটি সংগঠন।
এবার আবারও ২২শে অগাস্ট
প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ
মিয়ানমারের তরফ থেকে প্রকাশের
পর বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন
বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বিবিসিকে
জানিয়েছেন, তারাও প্রায় সাড়ে
তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ২২শে
অগাস্ট ফেরত পাঠানোর বিষয়ে
কাজ করছেন।
এর আগে বাংলাদেশ যে
২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার তালিকা
মিয়ানমারকে দিয়েছিলো তা থেকে সাড়ে
তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গার নাম
প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচন করে
বাংলাদেশকে দিয়েছে মিয়ানমার।
তালিকা
পাওয়ার পর এসব রোহিঙ্গাদের
মতামত যাচাই করার জন্য
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ
এবং সংস্থার কর্মীরা আজ মঙ্গলবার ক্যাম্পগুলোতে
সে কাজ শুরু করেছে।
পাশাপাশি
প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিত যেখানে
রাখা হবে ও যেখান
থেকে বিদায় দেয়া হবে,
সেসব স্থানগুলোতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতি আগেই নেয়া শুরু
হয়েছে বলে প্রত্যাবাসন বিষয়ক
কমিশনার নিশ্চিত করেছেন।
কিন্তু
রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন প্রত্যাবাসনের
জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি
আছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন
না হলে প্রত্যাবাসনে কেউ
রাজী হবেন না বলে
জানিয়েছে।
এক্ষেত্রে
এবার পাঁচটি দাবির একটি
তালিকা সম্বলিত লিফলেট গত দুদিন
ধরে ক্যাম্পগুলোতে প্রচার করছে ‘ভয়েস
অফ রোহিঙ্গা’ নামের একটি সংগঠন।
লিফলেটে
যে পাঁচটি দাবির বাস্তবায়ন
চায় রোহিঙ্গারা:
১. রোহিঙ্গারা আরাকানের স্থানীয় আদিবাসী এবং সে জন্য
তাদের ন্যাটিভ স্ট্যাটাস বা স্থানীয় মর্যাদা
সংসদে আইন করে পুনর্বহাল
করতে হবে যার আন্তর্জাতিক
গ্যারান্টি থাকতে হবে।
২. নাগরিকত্ব:
প্রথমত,
আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের
‘সিটিজেন কার্ড’ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত,
বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও
সিটিজেনশিপ কার্ড দিয়ে প্রত্যাবাসন
করে স্থানীয় নাগরিক মর্যাদা দিতে
হবে।
তৃতীয়ত,
একই সাথে বিশ্বের অন্যান্য
জায়গায় থাকা রোহিঙ্গাদের সিটিজেনশিপ
কার্ড দিয়ে স্থানীয় নাগরিক
মর্যাদা দিতে হবে।
৩. প্রত্যাবাসন
রোহিঙ্গাদের
তাদের নিজস্ব গ্রামে ফিরিয়ে
নিতে হবে এবং তাদের
কাছ থেকে কেড়ে নেয়া
জমিজমা যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত
দিতে হবে।
৪. নিরাপত্তা
আরাকানে
রোহিঙ্গাদের জীবন ও সম্পদ
রক্ষার জন্য রোহিঙ্গা পুলিশ
বাহিনীর সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী
বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
৫. জবাবদিহিতা
বার্মার
স্থানীয় আদালতের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা
আইসিসির মতো কোনো ইন্টারন্যাশনাল
ট্রাইব্যুনালে অপরাধীদের বিচার করতে হবে।
কিন্তু
এগুলো কি রোহিঙ্গাদের সবার
দাবি?
ভয়েস
অফ রোহিঙ্গা নামের সংগঠনের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন শমসু আলম।
বিবিসি
বাংলাকে তিনি বলছেন, তাদের
মধ্যে সক্রিয় আরও অন্য সংগঠনের
সাথে আলোচনা করেই তারা
এসব দাবি চূড়ান্ত করেছেন।
“আমরা
নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সভা
করেছি। রোহিঙ্গাদের
নিয়ে বসেছি। মতামত
নিয়েছি। সবাই
এসব দাবি আদায়ে একমত
হতে রাজি হয়েছে।”
আলম বলেন, এগুলো প্রত্যাবাসনের
জন্য তাদের দাবি এবং
৭৫ ভাগ রোহিঙ্গাই এর
সাথে একমত।
তিনি জানান, সব ধরণের
বিদেশী ডেলিগেশন কিংবা বাংলাদেশ সরকার
ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার কাছেও তারা বারবার
এসব দাবি তুলে ধরেছেন
যাতে করে ‘কার্যকর প্রত্যাবাসন
হয় ও রোহিঙ্গারা নিজ
দেশে ফিরে নিরাপদে জীবন
যাপন করতে পারে’।
মঙ্গলবার
বেলা বারটার দিকে প্রত্যাবাসনের
তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের মতামত
যাচাইয়ের কাজ করছিলেন জাতিসংঘ
শরণার্থী সংস্থার কর্মীরা।
কুতুপালংয়ে
২৬ নম্বর ক্যাম্পে তাদের
সাথে ছিলেন রোহিঙ্গাদের একজন
নেতা বদরুল আলম।
আলম বলছেন, “এখানে এগারো লাখ
রোহিঙ্গাদের দেখভাল করতে আমরা
ক্যাম্প ভিত্তিক প্রতিনিধি নিয়ে ৫৫ জনের
একটি কমিটি করেছি যে
কমিটিতে আমিও আছি।
প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা, ঘর-বাড়ি ভিটা
জমি ফেরত দেয়া ও
নিরাপত্তাসহ ৫টি দাবি আমাদেরও।”
তিনি বলেন, এসব দাবি
বাস্তবায়ন ছাড়া প্রত্যাবাসনের কাজ
সফল হবে না কারণ
নাগরিকত্ব ও স্থানীয় হিসেবে
মর্যাদা না পেলে রোহিঙ্গারা
সেখানে ফিরলে সেই আগের
মতোই নির্যাতন নিপীড়নের মুখে পড়তে হবে।
বদরুল
আলম বলেন, “জাতিসংঘ আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত
করুক আর বার্মা সরকার
তার অবস্থান পরিষ্কার করুক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব
বিষয়ে।”