টপ পোষ্ট

ফাইনাল ফাইনালের মতই: চরম উত্তেজনা ও নাটকীয়তায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

0

ক্রিকেট তার অনিশ্চয়তা
আর সৌন্দর্যের সবটুকু মেলে ধরল লর্ডসের ফাইনালে। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের
ভাগ্য বদল হলো অসংখ্যবার। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ টাই হয়ে গড়াল সুপার ওভারে। সেখানেও রোমাঞ্চের
তীব্র দুলুনি শেষে আবার টাই! শেষ পর্যন্ত দুই দলকে আলাদা করল বাউন্ডারি সংখ্যা। অবিশ্বাস্য
নাটকীয়তার পর বিশ্বকাপ জয়ের অনির্বচনীয় স্বাদ পেল ইংল্যান্ড।

ফাইনাল
নিষ্পত্তির সুপার ওভারে আগে
ব্যাট করে ১৫ রান
তোলেন বেন স্টোকস ও
জস বাটলার। জবাবে
আর্চারের ওভার থেকে প্রয়োজনীয়
রান সংগ্রহ করতে অক্ষম
হয় জিমি নিশাম ও
মার্টিন গাপটিল। ফলে
নাটকীয় জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন
হয় ইংল্যান্ড।

২৪২ রানের লক্ষ্যে নেমে
কিউই পেসারদের তোপে ৮৬ রানেই
৪ উইকেট হারিয়ে বসে
প্রথমবার শিরোপার স্বাদ নিতে মরিয়া
ইংল্যান্ড। টপ
অর্ডারের অমন ব্যর্থতার পর
মিডল অর্ডারে প্রতিরোধ গড়েছেন অলরাউন্ডার বেন
স্টোকস ও উইকেটকীপার জস
বাটলার। পঞ্চম
উইকেটে তাদের ১১০ রানের
জুটিতে জয়ের লক্ষ্যেই ছিলো
ইংল্যান্ড।

তবে শেষ পাঁচ ওভারে
পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে
ফাইনালের এ ম্যাচটিকে উত্তেজনার
চরমে পৌঁছে দেয় কিউই
পেসাররা। শেষ
ওভারে তো আরও রোমাঞ্চ
ছড়ান ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন
স্টোকস। ৬
বলে দরকার ছিলো ১৫
রান। পরপর
দুই বলে ১২ রান
নিয়ে ম্যাচ নিজেদের করে
নেন তিনি। তবে
এর পর দুই উইকেট
নিয়ে ম্যাচ টাই করে
নিউজিল্যান্ড।

ইংল্যান্ডের
ইনিংসের শুরুতে বোল্ট আগুন
ঝরালেও ইংলিশদের ইনিংসে পরপর চারবার
তোপ দাগেন হেনরি-গ্রান্ডহোম-ফার্গুসন-নিশাম। টপাটপ
রয়-রুট-বেয়ারস্টো-মরগানকে
তুলে নিয়ে লো-স্কোরিং
ফাইনালটি উত্তেজনাময় করে তুলেছেন কিউই
চতুর্থী। তাদের
তোপের মুখে রয় ১৭,
রুট ৭, বেয়ারস্টো ৩৯
এবং দলীয় ক্যাপ্টেন ইয়ন
মরগান ৯ রানে আউট
হন।

লর্ডসের
ফাইনাল ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে
ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও
দলীয় ২৯ রানের মাথায়
বিদায় নেন গাপটিল।
এরপর নিকোলসের সঙ্গে জুটি বেঁধে
দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা
করেন কিউই কাণ্ডারি কেন
উইলিয়ামসন। তবে
প্লাঙ্কেট-ওকসের বোলিং তোপে
৮ উইকেট খুইয়ে শেষ
পর্যন্ত ২৪১ রান সংগ্রহে
সামর্থ হয় নিউজিল্যান্ড।
ফলে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হতে
ইংলিশদের দরকার ২৪২ রান।

লন্ডনের
লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনাল দিয়ে শেষ
হচ্ছে বিশ্বকাপের ৪৬ দিন ব্যাপী
আসর। পর্দা
নামছে ইংল্যান্ডে বসা ক্রিকেট বিশ্বকাপের
১২তম আসরের। বৃষ্টিতে
মাঠ ভেজা থাকায় টস
হতে ১৫ মিনিট দেরি
হয়। টস
হয় বাংলাদেশ সময় ৩টা ১৫
মিনিটে, ম্যাচ শুরু হয়
৩টা ৪৫ মিনিটে।
ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করা
হচ্ছে গাজী টিভির পর্দায়।

রোববার
(১৪ জুলাই) দীর্ঘ ২৭
বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে
ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি
হয় টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে
ওঠা নিউজিল্যান্ড। লর্ডসের
এ ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের
সিদ্ধান্ত নেন কিউই দলপতি
কেন উইলিয়ামসন।

তবে আগে ব্যাটিং করে
ইংলিশ বোলারদের বিশেষ করে লিয়াম
প্লাঙ্কেট ও ক্রিস ওকসের
তোপের মুখে পড়ে খুব
একটা সুবিধা করতে পারেন
নি কেউই। যদিও
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৭৪
রান তুলে প্রতিরোধের ইঙ্গিত
দেন বাঁহাতি ওপেনার হেনরি নিকোলস
ও দলপতি কেন উইলিয়ামসন।

এর মধ্যে নিকোলস ফিফটি
করে আউট হলেও ফাইনালের
মঞ্চে ত্রিশের ঘরেই কাঁটা পড়েন
আসর সেরা হওয়ার দৌড়ে
থাকা কিউই ব্যাটিং কাণ্ডারি
উইলিয়ামসন। আর
মাঝের দিকে কিছুটা লড়াই
করেন নিউজিল্যান্ডের স্কোরকে আড়াইশ`র কাছাকাছি
পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন
উইকেটকীপার ব্যাটসম্যান টম ল্যাথাম।
যার ফলে দুর্দান্ত ইংলিশদের
সামনে ২৪২ রানের লক্ষ্য
দাঁড় করে ব্ল্যাক হর্সরা।

ইংলিশ
বোলিং তোপে শুরুতেই লেগ
বিফোরের ফাঁদে পড়েন কিউই
ওপেনাররা। তবে
রিভিউ নিয়ে প্রথমবার বেঁচে
গেলেও দ্বিতীয়বার আর বাঁচতে পারেননি
গাপটিল। ইনিংসের
৭ম ওভারে ক্রিস ওকসের
বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে
পড়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। চলতি
বিশ্বকাপে মোটেও ভালো করতে
না পারা কিউই এ
ওপেনার ফেরার আগে ১৮
বলে দুই চার আর
এক ছক্কায় করেন মাত্র
১৯ রান।

এরপর দলীয় ১০৩ রানে
উইলিয়ামসন এবং ১১৮ রানে
সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার
হেনরি নিকোলস। কিউই
কাণ্ডারি ব্যক্তিগত ৩০ রানে প্লাঙ্কেটের
শিকার হয়ে ফিরলে স্বভাবতই
চাপে পড়ে দল।
ফেরার আগে নিকোলসের সঙ্গে
৭৪ রানের জুটি গড়েন
তিনি।

পরে সেই চাপকে আরও
বাড়িয়ে দিয়ে ফেরেন ফিফটি
পাওয়া নিকোলস। এবারো
ঘাতক সেই লিয়াম প্লাঙ্কেট। এই
ইংলিশ পেসারের বলে সরাসরি বোল্ড
হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে
৭৭ বলে চার বাউন্ডারিতে
ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৫ রান আসে
বাঁহাতি এ ওপেনারের উইলো
থেকে।

এরপর ইনিংসের ৩২তম ওভারে দলীয়
১৪১ রানে চতুর্থ উইকেট
পড়ে কিউইদের। মাত্র
১৫ রান করে আউট
হন নির্ভরযোগ্য রস টেইলর।
মার্ক উডের বলে লেগ
বিফোর হন এই মিডল
অর্ডার। এরপর
মাত্র তিন রানের জন্য
ফিফটি বঞ্চিত হয়ে ফেরেন
টম ল্যাথাম (৪৭)। ইংলিশ
বোলারদের মধ্যে ওকস ও
প্লাঙ্কেট তিনটি করে এবং
আর্চার ও উড একটি
করে উইকেট লাভ করেন।

সংক্ষিপ্ত
স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৪১/৮ (গাপটিল ১৯,
নিকোলস ৫৫, উইলিয়ামসন ৩০,
টেইলর ১৫, ল্যাথাম ৪৭,
নিশাম ১৯, ডি গ্র্যান্ডহোম
১৬, স্যান্টনার ৫*, হেনরি ৪,
বোল্ট ১*; ওকস ৯-০-৩৭-৩,
আর্চার ১০-০-৪২-১, প্লাঙ্কেট ১০-০-৪২-৩,
উড ১০-১-৪৯-১, রশিদ ৮-০-৩৯-০,
স্টোকস ৩-০-২০-০)।

ইংল্যান্ড:
৫০ ওভারে ২৪১ (রয়
১৭, বেয়ারস্টো ৩৬, রুট ৭,
মর্গ্যান ৯, স্টোকস ৮৪*,
বাটলার ৫৯, ওকস ২,
প্লাঙ্কেট , আর্চার ০, রশিদ
০, উড ০; বোল্ট
১০-০-৬৭-০,
হেনরি ১০-২-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম
১০-২-২৫-১,
ফার্গুসন ১০-০-৫০-৩, নিশাম ৭-০-৪৩-৩,
স্যান্টনার ৩-০-১১-০)।

ফল: ম্যাচ ও সুপার
ওভার টাই; বাউন্ডারিতে এগিয়ে
থেকে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

ম্যান
অব দা ম্যাচ: বেন
স্টোকস

ম্যান
অব দা টুর্নামেন্ট: কেন
উইলিয়ামসন

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন