টপ পোষ্ট

শীতকালীন রোগবালাই থেকে বাঁচতে ৮ টিপস

0

তীব্রতা বেশি হোক বা কম, শীত মানেই অনেকের কাছে নানাবিধ অসুখ-বিসুখ ও ভোগান্তির নামান্তর। অথচ ঠাণ্ডাজনিত রোগের মূল কারণ হলো দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শীত মৌসুমে সুস্থ থাকতে তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করুন।

জেনে নিন সহজ কিছু টিপস যা অনুসরণে মুক্তি মিলবে শীতকালীন রোগবালাই থেকে:

মুখে মাস্ক পড়ুন
শীতের সময়ে অনেকের সর্দি-কাশি, অ্যাজমা বা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি বাড়ে। আর্দ্রতা পরিবর্তন, বাতাসে ধুলা-বালির আধিক্য- শীতকালে এসব রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ার কারণ মূলত এগুলোই৷ তাই এসময় বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক পড়ুন। ধুলাবালি থেকে নাক ও মুখ সুরক্ষিত থাকবে, মুক্তি পাবেন অল্পতেই ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা থেকে।

পায়ে মোজা রাখুন
আমাদের পায়ের পাতার রক্তনালীগুলো সাইনাসের সাথে সংযুক্ত। পা ঠাণ্ডা থাকলে সাইনাসের মিউকাস মেমব্রেনে শ্বেত রক্ত ​​কণিকার প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষকরা বলেন, পা উষ্ণ থাকলে তা রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে এবং ইমিউন কোষগুলোকে অবাধে চলাচল করতে দেয়। তাই শীতের সময়ে আরামদায়ক মোজা পড়ে থাকুন।

হাত সবসময় পরিষ্কার রাখুন
আমাদের হাতে নানান ধরণের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আনাগোনা লেগেই থাকে। আপনার অজান্তেই যখন এই হাত নাক বা মুখে যায় তখন হাতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নাকমুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগ সংক্রমণ ঘটায়। তাই বিশেষত শীতকালে নিয়মিত হাত ধোয়া একেবারেই অপরিহার্য।

বাহির থেকে ঘরে ঢুকলেই আগে হাত ধুয়ে নিন। টাকা বা এমন জিনিস, যা অনেকের হাত ঘুরে এসেছে, তা ধরার পর হাত ধুতে ভুলবেন না!

স্বাভাবিক চলাফেরা করুন
শীতে মাংসপেশীগুলো শক্ত হয়ে যায় বলে বাড়ে ব্যথাবেদনা৷ তাই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে শুয়েবসে না থেকে হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করুন। বাইরে বের হোন, বুকভরে শ্বাস নিন। গায়ে লাগান মিষ্টি রোদ।

ঠাণ্ডা বা ফ্লুর মূল কারণ যেহেতু ভাইরাস সংক্রমণ, তাই বাইরে বেরোলেই আপনি এগুলোতে আক্রান্ত হবেন না। তবে বাইরে যাবার আগে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পড়তে ভুলবেন না!

গরম পানি পান করুন
শীতপ্রধান দেশ চীনে একটা সময় ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ছিল বেশ। এ অবস্থার উত্তরণে মাও সেতুং নিলেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। স্টেশনে স্টেশনে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে তিনি ব্যবস্থা করলেন ফ্রি গরম পানির। এমনকি গ্রামের সাধারণ কৃষকও পেতেন এই সুবিধা। ফলে চীনাদের মধ্যে গরম পানি পানের অভ্যাস গড়ে উঠল, তারা মুক্ত হলো ফ্লু থেকে।

শীতে ফ্লু প্রতিরোধে আপনিও গরম পানির দ্বারস্থ হোন। দিনে যতটা পানি পান করেন তার একটি অংশ হতে পারে ঈষদুষ্ণ বা কুসুম কুসুম গরম পানি। এজন্যে হাতের কাছে রাখুন গরম পানির ফ্লাস্ক। পুরোপুরি বর্জন করুন ফ্রিজের ঠান্ডা পানি।

আর সাইনুসাইটিসের সমস্যা মোকাবেলায় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে সহনীয় গরম পানি দিয়ে কয়েকবার গার্গল বা গড়গড়া করুন একনাগাড়ে ৪০ দিন।

গোসল করুন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে
শীত এলে কেউ নিয়মিত গোসল করেন গরম পানি দিয়ে; কেউ কেউ তো গোসল করাই ছেড়ে দেন! অভ্যাস হিসেবে দুটোই অস্বাস্থ্যকর। গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর গোসল না করলে শরীরে ময়লা জমে রোগজীবাণু বাসা বাধে।

তাই শীতে প্রতিদিন গোসল করুন এবং তা অবশ্যই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে। পানি বেশি ঠান্ডা হলে কিছু গরম পানি মেশাতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন গোসলের পানির তাপমাত্রা যেন শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম হয়।

যেসব খাবার ঠাণ্ডা থেকে দেবে সুরক্ষা
ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সকালে নাশতার সাথে এককোষ কাঁচা রসুন ও ২৫/৩০ দানা কালোজিরা খান। কালোজিরা ভর্তা উপাদেয় হলেও কাঁচা কালোজিরা চিবিয়ে খেলে পুষ্টি পাবেন বেশি।

আয়ুর্বেদের একটি সূত্র হলো, যে অঞ্চলে যে মৌসুমে যে ফল জন্মে সেই ফলে থাকে সেই মৌসুমের রোগ প্রতিষেধক। তাই কমলা মাল্টা ডালিম সফেদাসহ শীতকালীন দেশজ ফল এবং গাজর বিট ব্রকলি টমেটো ক্যাপসিকাম শিম ফুলকপি ইত্যাদি সব ধরণের সিজনাল শাকসবজি খান। রসনা বিলাসের পাশাপাশি বাড়বে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা।

আর শীতের আগেই যদি প্রতিদিন আনারস, জাম্বুরা খান তাহলে রেহাই পাবেন ঠান্ডা-সর্দি থেকে।

দমচর্চা ও ইয়োগা করুন
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে দমচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে কয়েকবার প্রাণায়াম অনুশীলন যারা করেন তাদের দেহের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা ৩৭% পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাই বুক ফুলিয়ে দম নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দমের চর্চা করুন দিনে কমপক্ষে ছয় দফা।

সেই সাথে নিয়মিত কোয়ান্টাম ইয়োগা করুন। আধুনিক জীবনের জন্যে এর চেয়ে সহজ ও কার্যকরী ব্যায়াম আর হয় না! দিনে ৩০ মিনিট কোয়ান্টাম ইয়োগা চর্চা আপনাকে ঝরঝরে প্রাণবন্ততার অনুভূতি এনে দেবে, বাড়াবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও।

শীত মৌসুমে বিশেষভাবে চর্চা করবেন যে আসনগুলো :
গরম-ঠান্ডার সহনশীলতা বাড়াতে- উষ্ট্রাসন; টনসিল, ঠান্ডা, সর্দি-কাশি রোধে- শশাঙ্গাসন, উষ্ট্রাসন, ভুজঙ্গাসন, সর্বাঙ্গাসন, মৎস্যাসন, হলাসন, স্বরায়ন; কর্মক্ষমতা ও প্রাণপ্রাচুর্য বাড়াতে- বঙ্গাসন।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.