টপ পোষ্ট

শার্শায় গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ, দিশেহারা খামারিরা

0

যশোরের শার্শায় গবাদি পশুর শরীরে দেখা দিয়েছে ‘লাম্পি স্কিন’ ডিজিজ (এলএসডি) রোগ। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি গরু ইতোমধ্যে মারা গেছে। ফলে গরুর খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই।

কোরবানির ঈদের আগে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

তাদের অভিযোগ, রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ফলে গরুর সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে গ্রামের কিছু হাতুড়ে পশু ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে গরু সুস্থ না হয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।KSRM

জানা গেছে, উপজেলায় এক হাজারেরও বেশি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক গরুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে প্রাণী সম্পদ বিভাগ গরু আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বীকার করলেও গরুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে না।

অনেক খামারি ও কৃষক ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরু বিক্রি করছেন কম দামে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।

উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এ রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতিতে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশুর মালিকদের।

উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামের গরুর খামারি আব্দুর রশিদ জানান, তাদের খামারের একটি বড় গরুর পা ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। বড় গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ। শরীর পচে গর্ত হয়ে গেছে। সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ করেও সুস্থ হয়নি গরুটি।

মঙ্গলবার উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দেখা হয় বাগআঁচড়া এলাকার শহিদুলের সাথে। তিনি বলেন, প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না। খবর দিলে বাড়িতে যায় না কোন ডাক্তার। এ অবস্থায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি গরু মারা গেছে ‘লাম্পি স্কিনে’ আক্রান্ত হয়ে।

রুদ্রপুর গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে ইবাদুল বলেন, তার তিনটি গরুসহ এলাকার অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত। এছাড়া এই গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ভাইরাস রোগটি হানা দিচ্ছে। শুধু শার্শা উপজেলাতে নয় পার্শ্ববর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নেও দেখা দিয়েছে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগটি।

গরু খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হচ্ছে। অনেকেই কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

প্রাণীসম্পদ বিভাগের লোকজন জানান, ‘লাম্পি স্কিন’ রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে আক্রান্ত পশুকে পেনিসিলিন, এন্টি হিস্টামিন এবং জ্বর হলে প্যারাসিটামল দিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, এ রোগের ফলে গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু সুস্থ হতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি গরুর শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান আছে বলে দাবি করেন তিনি।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.