টপ পোষ্ট

আমার মনের অবস্থা কেউ বোঝেনি: কোহলি

0

প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ১০২০ দিন পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। গতরাতে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির টুর্নামেন্টের সুপার ফোরে ভারতের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি।

১০৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি ছিলো কোহলির। তবে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের বিপক্ষে গোলাপি বলের টেস্টে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলি। মাঝের সময়টা সেঞ্চুরি না পাওয়া কোহলিকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু দূর থেকে দেয়া সেসব উপদেশ মোটেও ভালো লাগেনি কোহলির। কিছুদিন আগে এই নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন কোহলি। আফগানদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাবার পর, আরও একবার অভিমানী সুর কোহলির কন্ঠে।

আগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে নিজের ব্যাটিং নিয়ে কোহলি বলেন, ‘খুব ভাল লাগছে। আমি আপ্লুত। গত আড়াই বছর ধরে অনেক কিছু শিখেছি। শতরানের পরে আমি একটু অবাকও হই। কারণ এই ফরম্যাট থেকে যে আমি শতরান পেতে পারি, সেটা ভাবনার বাইরে ছিল। ঈশ্বরের আশীর্বাদেই এটা সম্ভব হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করেছি। এই মুহূর্ত শুধু আমি নয়, গোটা দলের কাছেই বিশেষ আবেগের।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে অনেকে পরামর্শ দিয়েছে। অনেকের উপদেশ শুনতে পাচ্ছিলাম। সবাই বলছিল, আমি এখানে ভুল করছি, ওখানে ভুল করছি। আমি কাউকে বোঝাতে পারছিলাম না, আমার মনের মধ্যে কি চলছে। মানুষ আপনাকে উপদেশ দেবে। কিন্তু আপনার মনের কথা কেউ বুঝতে পারবে না।’

২০০৮ সালে ওয়ানডে দিয়ে অভিষেকের পর ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ৭০টি সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। এরপর শতরান না পেলেই তাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হতো। সেটিও মনে করিয়ে দিলেন কোহলি, ‘৬০ রান করলেও সবাই বলছিল, আমি ব্যর্থ হয়েছি। খুব অবাক লাগতো। কিন্তু কিছু করার ছিল না। নিজেকে বুঝিয়েছি। শূন্য থেকে শুরু করেছি।’

ছন্দে ফেরার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান কোহলি। তিনি বলেন, ‘মাঝের এই কয়েকটা মাসের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। কারণ, এই সময়টা শুধু ক্রিকেট নয়, জীবনের অন্য মানে আমাকে বুঝিয়েছে। আমি আবার শূন্য থেকে শুরু করেছি। আবার খেলতে ভাল লাগছে।’

শতরানের পর মাথার মধ্যে কি চলছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে কোহলি বলেন, ‘অনেক কিছু চলছিল। দলে ফেরার সময় প্রত্যেকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং আমি যেভাবে খেলতে চাই, সেভাবেই খেলতে বলেছিল। বাইরে থেকে অনেকে অনেক কথাই বলছিল। আমরা পাত্তা দিইনি।’

দুঃসময়ে স্ত্রী আনুষ্কার অবদানও স্বীকার করেন কোহলি। তিনি বলেন, ‘জীবনের কঠিন সময়ে কোনও মানুষের সাথে কথাবার্তা বললে, পুরো বিষয়টি খুব সহজ হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে সেই কাজটা করেছে আনুষ্কা। কঠিন সময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।’

এশিয়া কাপের আগে এক মাস খেলা থেকে দূরে ছিলেন কোহলি। বিশ্রামে থাকাকালীন ব্যাটও ছুঁয়ে দেখেননি তিনি। আর বিশ্রামই বড় টনিক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান কোহলি, ‘খেলা থেকে দূরে থাকার সময় অনেক কিছু শিখেছি। দলে ফেরার পর এমন নয় যে অনেক বেশি রান করবো, ওমনটা ভেবে এসেছিলাম। কত দিন শতরান পাইনি সে সবও মাথায় ছিল না। শুধু ভেবেছিলাম, এই খেলা থেকে কত কি পেয়েছি। এটাই আমার মনকে শান্ত করে তুলেছিল। তরতাজা হয়ে নেমেছিলাম। খেলা থেকে বিরতি নেওয়ার পরেই বুঝেছিলাম, শারীরিক এবং মানসিক ভাবে কতটা ক্লান্ত ছিলাম। খেলায় এত প্রতিন্দ্বন্দিতা থাকে যে, সেটা নিয়ে ভাবার সময় থাকে না। আমার পক্ষে বিরতি নেওয়া শাপে বর হয়েছে। তারপর যখন খেলা শুরু করলাম, তখনই বুঝতে পারলাম ছন্দ ফিরে পাচ্ছি। ক্রিজে নেমে সেটা কাজে লাগানোই দরকার ছিল।’

এবারের এশিয়া কাপের রানের মধ্যে দিয়েই শুরু করেছিলেন কোহলি। হংকং ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হাফ-সেঞ্চুরি করেন কোহলি। তাই নিজেই বুঝতে পারছিলেন রানে ফিরতে যাচ্ছেন কোহলি। তবে সেঞ্চুরির ইনিংসে অবাক হয়েছে তিনি।

কোহলি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম ধীরে ধীরে রানের মধ্যে ফিরছি। কিন্তু আজ যেভাবে ব্যাট করেছি সেটা দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছি।’

৯০ মিনিট ক্রিজে থেকে ৬১ বল খেলে ১২টি চার ও ৬টি ছক্কায় অপরাজিত ১২২ রান করেন কোহলি। স্ট্রাইক রেট ছিলো ২শ। এই ইনিংসটি আনুষ্কা ও মেয়ে ভামিকাকে উৎসর্গ করেন কোহলি। তিনি বলেন, ‘শতরানের পর আংটিতে চুমু খেলাম। কারণ, আমার ফিরে আসা এবং সবসময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান একজন মানুষেরই রয়েছে। সে আমার স্ত্রী আনুষ্কার। এই শতরান সবার আগে তাকে এবং আমাদের মেয়ে ভামিকাকে উৎসর্গ করছি।’

শেয়ার করুণ

Comments are closed.