টপ পোষ্ট

জিৎ- কে বিয়ে করতে চান সায়ন্তিকা!

0

‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’-এর কথা অজস্র বার শুনেছি। ছোট থেকে হিন্দি ছবিতে দেখেওছি। নায়ককে দেখেই নাকি নায়িকা প্রেমে পড়ে যায়। কখনও আবার উল্টোটা। ভাবতাম, এই প্রথম দেখায় প্রেম-টেম শুধু ছবিতেই হয়। আমার মতো সাধারণ মেয়ের সঙ্গে কি এ সব হতে পারে!

আমি তো আর ‘কভি খুশি কভি গম’-এর কাজল নই যে শাহরুখ আমাকে দেখেই প্রেমে এক্কেবারে হাবুডুবু খাবে! কিন্তু জিৎ-দা এসে আমার যাবতীয় ভাবনা, অবিশ্বাসকে এক লহমায় তছনছ করে দিয়ে চলে গেল। প্রথম দর্শনেই ধপাস করে ওর প্রেমে পড়ে গেলাম!

সে বহু বছর আগের কথা। তখন আমি স্কুলে পড়ি। শুনেছিলাম কোনও এক নতুন নায়কের ছবি আসছে। নাম ‘সাথী’। মা-বাবাকে রাজি করিয়ে ছুট দিয়েছিলাম প্রেক্ষাগৃহে। সেই সময়ে ঝাঁ চকচকে মাল্টিপ্লেক্স ছিল না। ছিল না কাউন্টার থেকে ভেসে আসা ক্যারামেল পপকর্ণের মিষ্টি গন্ধ। কাঠের শক্ত চেয়ারে বসে আলো-আঁধারি হলের পর্দায় প্রথম দেখেছিলাম জিৎ-দাকে। সেই যে দেখলাম, প্রেমে পড়ে গেলাম। ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’। সেই প্রেম রয়েই গেল। তখনও কি জানতাম এই মানুষটার সঙ্গেই এক দিন ছবি করব? তার নায়িকা হব?

কাট টু ২০১২। ‘আওয়ারা’ ছবিতে আমি জিৎ-দার নায়িকা। মানে সুপারস্টার জিতের নায়িকা। তার আগেও বেশ কিছু ছবি করেছিলাম। ক্যামেরার সঙ্গে আলাপটা মোটামুটি হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু প্রিয় নায়কের বিপরীতে কাজ করব ভেবেই ভয়ে-আনন্দে হাত-পা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছিল। এই ছবির প্রস্তাব আমার কাছে হঠাৎ করেই এসেছিল!

আচমকা একদিন মহেন্দ্র সোনি আর শ্রীকান্ত মোহতা ফোন করে বললেন, তাঁরা একটি ছবির বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। আমিও সাত-পাঁচ চিন্তা না করে হায়দরাবাদের বিমানে উড়ে গেলাম। সেখানেই রবি স্যর (রবি কিনাগি, ছবির পরিচালক) আমার পরীক্ষা নেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই জানতে পারি, আমি জিৎ-দার নায়িকা! তখন যে ঠিক কতটা খুশি হয়েছিলাম, সেটা এখনও লিখে বুঝিয়ে উঠতে পারব না। পরে জেনেছিলাম, জিৎ-দাই নাকি আমাকে এই ছবিতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। এই ছবি আমায় নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ দিয়েছে। ওর কাছে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

হায়দরাবাদ, মালয়েশিয়া, লাদাখ— নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে শ্যুট করেছিলাম আমরা। আমার যখন শট থাকত না, জিৎ-দাকে দেখতাম। বাধ্য ছাত্রীর মতো শেখার চেষ্টা করতাম। ভুল হলে জিৎ-দা কোনও দিন বকাবকি করেনি। ও খুব শান্ত ভাবে ভুলটা ধরিয়ে দিত। এ রকম ঠাণ্ডা মাথার মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। এখনও যখন ছোটপর্দায় ‘আওয়ারা’ চলে বা কোথাও ছবির গানগুলো শুনি, সে দিনগুলোর কথা ছবির মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

জিৎ-দার সঙ্গে আমার সম্পর্ক শুধু মাত্র পেশাদারি নয়। ও আমার খুব কাছের একজন বন্ধু। ওকে আমি শ্রদ্ধা করি। ভালবাসি। মাঝেমধ্যে বলেও ফেলি, ‘জিৎ-দা আমি তোমাকে ভালবাসি। আই লাভ ইউ। তোমায় যদি বিয়ে করতে পারতাম!’ জিৎ-দা আমার কথা শুনে হাসে। তার পর আমার পিঠে স্নেহের হাত রেখে বলে, ‘আই লাভ ইউ টু বাবু’। ওর মুখে এই কথা শুনে এখনও একজন ‘ফ্যানগার্ল’-এর মতোই আনন্দ পাই। অনেকেই ‘আওয়ারা’ দেখে আমার সঙ্গে জিৎ-দার রসায়নের প্রশংসা করেন। আমি বলি, জিৎ-দার প্রতি আমার মনে যে প্রেম আছে, সেই প্রেমই মনে হয় পর্দায় ফুটে উঠেছিল!

জিৎ-দার থেকে অনেকেই অনেক কিছু শিখতে পারেন। কিন্তু নারীকে কী ভাবে সম্মান করা উচিত, সেটা বোধ হয় ওকে দেখলে সব থেকে ভাল ভাবে শেখা যায়। পেশাগত জীবনের বাইরেও কোনও সমস্যায় পড়লে আমি জিৎ-দার কাছে ছুটে যাই। ওর থেকে পরামর্শ চাই। কারণ জিৎ-দা কখনও মন ভোলানো কথা বলে না। আমি যেটা শুনে আনন্দ পাব, ও সেটা বলবে না। বরং যেটা করলে আমার ভাল হবে, ও আমাকে সেটাই করতে বলবে। এ রকম নির্ঝঞ্ঝাট, সৎ, কাজ-পাগল মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। ওর জন্মদিনে আরও একবার বলব, এই মানুষটাকে আমি সত্যিই খুব ভালবাসি।

জিৎ-দার জন্মদিনে ওকে নিয়ে লিখতে বসে কত কথাই মনে আসছে। সবটা ভাল করে লিখেও উঠতে পারছি না। আবেগের কাছে শব্দ কি আর ধোপে টেকে! আমার কাছে জিৎ-দা আর প্রেম সমার্থক। সেই কবে থেকে এই মানুষটাকে ভালবাসছি। এখনও ভালবাসি, ভবিষ্যতেও ভালবাসব।

জিৎ-দা তুমি আক্ষরিক অর্থেই ‘নায়ক’। যে নায়ক পাশে থাকতে জানে, ভালবাসতে জানে। জানে ঠিক-ভুলের যাচাই করতে। যা কিছু ভাল, সবই তুমি জয় করেছ। জন্মদিনে উপহার হিসেবে এই লেখা আর শ্রদ্ধা ছাড়া তোমাকে আর কী-ই বা দেব!

শেয়ার করুণ

Comments are closed.