টপ পোষ্ট

বাড়ছে পদ্মার পানি, হাজারও মানুষ পানিবন্দী

0

পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জের নিন্মাঞ্চলের হাজারও পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন এখন নৌকা। পানিবন্দীর কারনে জনজীবনে নেমে এসেছে নানা দুর্ভাগ। এছাড়া নবাবগঞ্জর সীমান্তবর্তী জয়কষ্ণপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। ১২টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। গবাদিপশু নিয়ে মহা বিপদে আছেন পরিবারগুলো।

দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জ রক্ষা বাঁধের পশ্চিম অংশের বিস্তীর্ণ ১২টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তিতপালিদয়া, পানিকাউর, কঠুরি, আশয়পুর, রায়পুর, ঘোষাইল, কেদারপুর, আর ঘোষাইল, রাজাপুর, বালেঙ্গা, কান্তারটেক, খাটবাজার, নয়াডাঙ্গী, চারাখালী ও পশ্চিম সোনাবাজু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। অপরদিকে দোহার উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে নয়াবাড়ি, কুসুমহাটি, মাহমুদপুর, বিলাসপুর ও নারিশা ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটঘাট এলাকাটি পদ্মার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সহ মেঘুলা বাজারের পদ্মার তীরবর্তী ব্যবসায়ীরা মানবতের জীবনযাপন করছনে বলে জানান তারা। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মধুরচর এলাকার পদ্মার তীরবর্তী অনেক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে নৌকায় চরে ঝুঁকিতে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।

নবাবগঞ্জের বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। সরকারি বেসরকারি কোনো ত্রাণও পোঁছায়নি। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে বন্যাকবলিত এসব এলাকার বাসিন্দারা। পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। তলিয়ে গেছে স্কুল, হাঁট-বাজার, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পানি বৃদ্ধির ফলে গৃহপালিত গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন। করোন ভাইরাসের কারণে সবার উপার্জনই বন্ধ। এরই মধ্যে বন্যা দেখা দেওয়ায় অনেকেরই দু’বেলা দুমুঠো খাবারও জুটছে না।

আশয়পুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘পদ্মার পানি বাইড়া পাটসহ সব ফসল এহন পানির নিচে। আমাগো কষ্ট কেউ দ্যাহে না। রায়পুর গ্রামের দিপালী রানী বলেন, সবাই খালি ছবি তুইলা নিয়া যায়। প্রতি বছর বন্যায় মাইসে আহে ছবি তুলবার। আমাগো তো সাহায্য দেয় না। এক মাস অইলো পানি উঠছে। রাস্তাঘাট তলায় গেছে। হেই যে ১০ কেজি চাইল পাইছিলাম। বন্যা অইছে থিকা তো একটু আইসা দেখলোও না।

হরিদাসী রানী বলেন,‘১ মাস হয় ঘরে পানি উঠছে। মাচা পাইতা পোলাপান নিয়া আছি। করোনায় কেউর কাম কাইজ নাই। কত কষ্টে চলি। ঘরে খাইবারও থাহে না। এহন তুরি তো সাহায্য করলো না কেউ’।

জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়াররম্যান আলহাজ্ব মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, পদ্মার তীরবর্তী এবং বেড়িবাঁধের বাইরে থাকায় প্রতি বছর পদ্মার পানিবন্দী হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ১২/১৩ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পদ্মার পাড়ে বেড়িবাঁধ থাকায় পদ্মার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়।

নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু বলেন, জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পদ্মার তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরে ৮/৯ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী যারা রয়েছেন তাদের থাকার সমস্যা হলে তাদের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য সংকট যাতে দেখা না দেয় তার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দোহার উপজলো নির্বাহী র্কমর্কতা এএফএম ফিরোজ মাহমুদ বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়নে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার পানিবন্ধি যারা রয়েছে তাদের থাকার সমস্যা হলে তাদের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.