টপ পোষ্ট

টানা জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ

0

২ বলে প্রয়োজন ১৩ রান। ম্যাচ বাংলাদেশের মুঠোয়। তখনই মুস্তাফিজুর রহমান করে বসলেন ‘নো বল’, টম ল্যাথাম সেটি পাঠালেন বাউন্ডারিতে। আচমকাই ম্যাচে উত্তেজনা, ২ বলে ৮ রান তো খুবই সম্ভব! শেষ পর্যন্ত অবশ্য পারলেন না ল্যাথাম। অসাধারণ ইনিংস খেলেও নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক থমকে গেলেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানার কাছাকাছি গিয়ে। শঙ্কা উড়িয়ে বাংলাদেশ পেল আরেকটি জয়ের স্বস্তি।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ২-০ ব্যবধানে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ১৪১ রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডকে শেষ বল পর্যন্ত লড়াইয়ে রাখেন ল্যাথাম। তিনি হারেননি, কিন্তু যোগ্য সঙ্গীর অভাবে অল্পের জন্য হেরে যায় তার দল। ৬ চার ও ১ ছক্কায় কিউই অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৬৫ রান করে।

গত মাসের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ও চলতি সিরিজের দুই ম্যাচ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ব্যক্তিগত সেরা ইনিংসটি হয়তো উপহার দিলেন তিনিই। কিন্তু সতীর্থদের কাউকে সঙ্গী না পেয়ে দলকে দারুণ এক জয় এনে দিতে পারলেন না কিউই অধিনায়ক।

দুই দলের ১৪০ রানের আশেপাশের স্কোরই বলে দিচ্ছে, এ দিন উইকেট ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য তুলনামূলক ভালো। এই মাঠের সাম্প্রতিক চিত্র বিবেচনায় এই উইকেট তো বলা যায় ব্যাটিং স্বর্গ।

টস জয়ের পর প্রয়োজন ছিল টপ অর্ডারের রান। লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ বাংলাদেশকে এনে দেন সেই কাঙ্ক্ষিত শুরু। লিটন অবশ্য বেঁচে যান শূন্য রানেই। কোল ম্যাকনকির বলে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ ছাড়েন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।

জীবন পেয়ে লিটনই নিউ জিল্যান্ডকে ভোগাতে থাকেন বেশি। এজাজ প্যাটেলকে বাউন্ডারি মারেন দুটি। রান বাড়ানোর কাজটি করতে থাকেন তিনি। সঙ্গ দিয়ে যান নাঈম।
নবম ওভারে দলের রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ। ৯ ম্যাচের মধ্যে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের প্রথম ফিফটি এটি। পরের ওভারে রাচিন রবীন্দ্রকে স্লগ সুইপে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন লিটন। দুই দল মিলিয়েই যেটি সিরিজের প্রথম ছক্কা।

জুটি ভাঙে ওই ওভারেই। একটি শুধু নয়, পরপর দুই বলে নিউ জিল্যান্ডকে উইকেট এনে দেন রবীন্দ্র। টার্ন করে অনেক বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বল অন সাইডে খেলতে গিয়ে অদ্ভূতভাবে স্টাম্পে টেনে আনেন লিটন। তার ইনিংস থামে ২৯ বলে ৩৩ রানে।

ডান-বাঁহাতি কম্বিনেশনের কারণে হয়তো তিনে নামানো হয় মুশফিকুর রহিমকে। টার্নে পরাস্ত হয়ে তিনি স্টাম্পড প্রথম বলেই। টি-টোয়েন্টিতে তার এটি ষষ্ঠ শূন্য, এর মধ্যেই চারটিই ‘গোল্ডেন ডাক।’

সাকিব আল হাসান চারে নেমে শুরু করেছিলেন দারুণ ইতিবাচকভাবে। পায়ের দুর্দান্ত ব্যবহারে ম্যাকনকির বলে বাউন্ডারি মারেন সোজা ব্যাটে। শর্ট বল সীমানায় পাঠান এক্সট্রা কাভার দিয়ে। কিন্তু সম্ভাবনার ঝিলিক দেখিয়েই নিভে যান পরের বলে। উঁচিয়ে মেরে ধরা পড়েন লং অফে। দারুণ শুরুর পর হুট করেই কিছুটা থমকে যায় দলের ইনিংস।

মাহমুদউল্লাহ নেমেই দারুণ কিছু শটে আবার গতিময় করেন দলের পথচলা। তবে এক প্রান্তে টিকে থাকা নাঈম পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি ইনিংসের পরের দিকে। প্রায় ১৬ ওভার উইকেটে থেকে শেষ পর্যন্ত আউট হন ৩৯ বলে ৩৯ করে।

দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় আউট হয়ে যান আফিফ হোসেনও। বাংলাদেশ তবু ১৪০ ছাড়াতে পারে মাহমুদউল্লাহর সৌজন্যে। ৫ চারে ৩২ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক। শেষ দিকে ৯ বলে ১৩ রান করেন নুরুল হাসান সোহান।

নিউ জিল্যান্ডে রান তাড়া ছিল পুরোপুরিই ল্যাথামের ব্যাটিংয়ের গল্প। তাদের দুই ওপেনার ব্যর্থ আবারও। সাকিবের বলে দারুণ এক ছক্কার পর নিচু হওয়া শর্ট বলে বোল্ড রাচিন রবীন্দ্র। নতুন বলে আবারও দুর্দান্ত বল করা শেখ মেহেদি হাসানের আর্ম বলে স্টাম্পড টম ব্লান্ডেল।

তিনে নেমে দলকে এগিয়ে নেন ল্যাথাম। তৃতীয় উইকেটে তাকে অনেকটা সময় সঙ্গ দেন উইল ইয়াং। এই জুটি যখন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠার পথে, ইয়াংকে ২২ রানে ফিরিয়ে দেন সাকিব।

এরপর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, হেনরি নিকোলসরা ব্যর্থ পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। কিন্তু দুর্দান্ত স্কিল আর টেম্পারামেন্টের প্রদর্শনীতে ম্যাচ জিইয়ে রাখেন ল্যাথাম। ৩৮ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি, ১৫ টি-টোয়েন্টিতে যা তার প্রথম।
শেষ দিকে কোল ম্যাকনকি এক প্রান্তে থেকে অধিনায়ককে সঙ্গ দিয়ে যান। কিন্তু দ্রুত রান তিনি তুলতে পারেননি। একার চেষ্টায় তাই কাছাকাছি যেতে পারলেও শেষের বৈতরণী আর পার হতে পারেননি ল্যাথাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৬ (নাঈম ৩৯, লিটন ৩৩, মুশফিক ০, সাকিব ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩৭*, আফিফ ৩, সোহান ১৩; এজাজ ৪-০-২০-১, ম্যাকনকি ৪-০-২৪-১, বেনেট ৪-০-৩২-১, ব্রেসওয়েল ৩-০-৩০-০, রবীন্দ্র ৪-০-২২-৩, সিয়ার্স ১-০-১১-০)।

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৭/৫ (ব্লান্ডেল ৬, রবীন্দ্র ১০, ইয়াং ২২, ল্যাথাম ৬৭*, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮, নিকোলস ৬, ম্যাকনকি ১৫*; মেহেদি ৪-০-১২-২, নাসুম ৩-০-১৭-১, সাকিব ৪-০-২৯-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৬-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০, সাইফ ৪-০-৩৬-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.