টপ পোষ্ট

এই গরমে কী খাবেন, কী খাবেন না?

0

বাংলাদেশে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে সবসময়ই থাকে অসহনীয় গরম আবহাওয়া। প্রচণ্ড গরমে মানুষ অস্থির থাকে। তারপরেও সবাই চায় সুস্থভাবে এই ঋতুকে উপভোগ করতে। কিন্তু কিছু সাধারণ শারীরিক সমস্যা যেমন- কাশি, জ্বর, হিটস্ট্রোক, এলার্জি, কোস্টকাঠিন্য, পানিশূন্যতা, মাথাব্যাথা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় অনেকেই আক্রান্ত হয়। এছাড়াও পানিবাহিত রোগ যেমন- কলেরা, জন্ডিস, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিংও হয় অনেকের।

এই ধরনের মৌসুমী অসুস্থতা থেকে দূরে থাকতে সুষম ও সঠিক খাদ্যব্যবস্থা এই সময়ে অনেক জরুরি। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিতে নানা রকম ফল ও সবজি পাওয়া যায় যা দিয়ে সহজেই শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়। এই গরমে নিজেকে সুস্থ রাখতে কী কী করবেন, কী খাবেন আর কী পরিহার করবেন তাই সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ

নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুনঃ
গ্রীষ্মে পানিশূন্যতা খুব ঘন ঘন হতে দেখা যায়। অতিরিক্ত তাপে শরীর ঘেমে এই পানিশূন্যতা দেখা যায়। পানিশূন্যতা হলে শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই গ্রীষ্মে তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হয়। সব তরলের মধ্যে পানি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ। এই সময় দৈনিক ২-৩ লিটার ফ্রেশ পানি পান করা উচিত। তরলের মধ্যে কফি, চা, কোল্ড ড্রিংক অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া উচিত। প্রচণ্ড গরমে খুব ঠাণ্ডা পানি কোনোভাবেই খাওয়া উচিত নয়। প্রচণ্ড গরম থেকে ঘরে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো। ডাবের পানি, লেবু পানি, কাঁচা আমের জুস, বেলের শরবত, মাঠা ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর পানীয়। যা তরল চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রক্তে ইলেক্ট্রোলাইটসের ঘাটতিপূরণেও সাহায্য করবে।

গ্রীষ্মের ফল ও সবজি উপভোগ করুনঃ
তরমুজ, বাঙ্গি, আম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি গ্রীষ্মের ফল। রঙিন ও রসালো এই ফলগুলো পুষ্টি উপাদান সরবরাহ ছাড়াও আপনাকে সতেজ ও ঠাণ্ডা অনুভুতি প্রদান করবে। তরমুজ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজে লাইকোপিন ত্বককে সূর্যরশ্মির ক্ষতি হওয়া থেকে সাহায্য করবে। আনারসও এই সময় অনেক পাওয়া যায় যা থেকে ভিটামিন সি, কপার ও পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এই পুষ্টি উপাদান একত্রে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

আম খান কাঁচা পাকাঃ
কাঁচা আমের জুস শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। পাকা আমে থাকে ভিটামিন এ ও সি। পাকা আমের ক্যারোটিন ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

উপকারে আসবে লিচুঃ
লিচুতে রয়েছে পটাশিয়াম ও অক্সালেট। যা শরীরের নানা কাজে আসে। গ্রীষ্মের সব রকম ফলের স্বাদ সবারই নেওয়া উচিত। শুধুমাত্র আম না খেয়ে সবরকম ফলের স্বাদ নিতে হয়।

বাদ দেবেন না মৌসুমী সবজিঃ
ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, ধুন্দুল, শসা, পটল, ঢেঁড়স ইত্যাদি গ্রীষ্মের সবজি। রঙ ও পুষ্টি উপাদানের বৈচিত্রে ভরপুর এই সবজিগুলো আপনাকে পুরো গ্রীষ্মকালে রাখবে সুস্থ। সহজে হজমযোগ্য এই সব শরীরে পুষ্টি উপাদান ছাড়াও পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। শশাতে ৯০ শতাংশই পানি। গরমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে শসার জুড়ি নেই।
পটল ঔষধের মত কাজ করে যা জ্বর ও ঠাণ্ডা কাশি নিরাময়ে সাহায্য করে। ঝিঙ্গা শরীরে পানির মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যাদের গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্যে গ্রীষ্মকালীন সবজি খুবই উপকারি।

গ্রীষ্মে যেসব খাবার একদমই এড়িয়ে চলবেনঃ
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত মশলা ও তেল অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। ভাজা পোড়া খাবার গ্রীষ্মে একেবারেই না খাওয়া উচিত। পাতলা ঝোলের তরকারি গ্রীষ্মের জন্য অনেক উপকারি। এছাড়া গরু, খাসির ভুঁড়ি, কলিজা, মাংস, পায়া ইত্যাদি এসময় এড়িয়ে চলা উচিত। গ্রীষ্মে এগুলো হজমে অসুবিধা দেখা দেয়। কাঁকড়া ও চিংড়ি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায় তাই গ্রীষ্মে এগুলো এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। রুটি, তন্দুর রুটি, বাটার বান, ব্রেড ইত্যাদি গ্রীষ্মকালে এড়িয়ে চলা উচিত। ভাত (নরম) এই সময়ে সবচেয়ে উপযোগী খাবার। ধূমপান ও অ্যালকোহল এ সময়ে এড়িয়ে চলা উচিত। শুষ্ক ফল এই সময় না খাওয়াই ভালো।

গ্রীষ্মে সুস্থ থাকতে আরও যা করণীয়ঃ
এই সময় সঠিক খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি শরীরের অনেক যত্ন নিতে হয়। ঢিলেঢালা সুতির কাপড় এসময়ে উপযোগী পোশাক। প্রতিদিন গোসল করলে শরীরের জন্যে অনেক ভালো হয়। সানগ্লাস পরে রোদে বের হলে চোখের ক্ষতি হয়না। ত্বকের সুরক্ষার জন্যে সান্সক্রিম অবশ্যই লাগাতে হবে। মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে দিনে দুইবার কমপক্ষে পরিষ্কার করতে হবে।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.