টপ পোষ্ট

অনলাইন ক্লাস নিয়ে ইউজিসির দুই প্রস্তাব

0

চলমান করোনা সংকটাবস্থায় অনলাইনে ক্লাস নিয়ে বৈষম্য দূর ও শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি ইন্টারনেট ও ঋণ সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মূলত অনলাইন ক্লাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অন্তর্ভুক্ত করতেই এই দুই প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পড়াশোনার বাইরে রয়ে যায় দেশের ২৮ লাখ শিক্ষার্থী। পরে সাড়ে তিন মাস পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রথম অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপরই একে একে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু হয় অনলাইন ক্লাস। যা দেশের ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে, উপকরণের স্বল্পতা, নির্দিষ্ট নীতিমালা ও শিক্ষকদের অনেকটা প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু হয় এ কার্যক্রম। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের শেষ নেই। বিশেষ করে ডিভাইস ও মানসম্মত ইন্টারেন্ট সুবিধা না পাওয়ায় ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় নানা বিপাকে।

এসব অসুবিধার কথা মাথায় রেখে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা ও অনলাইন পাঠের জন্য স্মার্টফোনসহ অন্যান্য সামগ্রী কিনতে ঋণের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইউজিসির মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ প্রান্তিক অঞ্চলের তথা দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। নেটের অধিক দাম ও ডিভাইস না থাকায় এসব শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় এসব শিক্ষার্থী সুদ মুক্ত কিংবা স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে তাদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন হবে।

এই দুই প্রস্তাব গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে আমরা অনলাইন ক্লাস চালু করেছি। কিন্তু, এ ব্যবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্রদান অথবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়া যায় কী-না সে বিষয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

করোনা পরবর্তী সময়েও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

অন্যদিকে, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনলাইনে ক্লাস শুরুই করতে পারেনি অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো। গত ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে সম্মতি জানান।

জানতে চাইলে ঢাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এ প্রস্তাবনার কথা আজই আমি জানতে পেরেছি। আমার বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জন শিক্ষার্থী নিম্ন পরিবারের হওয়ায় তাদের ইন্টারনেট ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অপরদিকে, তিনজন শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন না থাকায় তারা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। তাই, বিভাগের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট ব্যয় বহনের জন্য ৩৩ শিক্ষার্থীকে সামান্য পরিমাণ অর্থ ও তিন শিক্ষার্থীকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইউজিসি যে প্রস্তাব দিয়েছে তা সময়পোযোগী ও প্রশংসাযোগ্য। এর ফলে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। আমরা চাই না, চলমান করোনা সংকটে কোন শিক্ষার্থী মানসিক কিংবা একাডেমিকভাবে অনিশ্চয়তায় ভুগুক।’

এর আগে অনলাইন ক্লাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সার্বিক পরিস্থিতি ও সক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয় জানতে ইউজিসি একটি জরিপ চালায়। সেখানে ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ডিভাইস রয়েছে বলে জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে।

১৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্ট ফোন বা অন্য কোনো ডিভাইস নেই। এ কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি ইন্টারনেট প্যাকেজ এবং স্মার্ট ফোন কিনতে সহজ শর্তে অর্থ ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.