টপ পোষ্ট

একজনের সংস্পর্শে ৪০জন কোয়ারেন্টাইনে

0

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে প্রথমবারের মতো আক্রান্তদের মধ্যে একজনের সংস্পর্শে আসা ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ইতালি ফেরত দুইজনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের মাধ্যমে তার স্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছেন। তারা ২০-৩৫ বছর বয়সী। সংক্রমণ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুল ইসলাম জানান, ‘অবশ্যই আছে। এই আশঙ্কা রোধের জন্য আমরা ব্যবস্থাও করেছি। তাদের কন্ট্রাক্ট ট্র্যাকিং করে কোথায় গেছে, কাদের সঙ্গে মিশেছে- সবকিছু করে আমরা প্রথম জনের জন্য ৪০ জনকে ট্র্যাক করেছি। কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, তাদেরকে আমরা ফার্স্ট কন্ট্রাক্ট ধরব, এক্সটেন্ডেড কন্ট্রাক্ট ধরব, তাদের কীভাবে কোয়ারেন্টাইল করব- সবকিছু ফলো করেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

স্বাস্থ্যসচিব আরও বলেন, ‘কার সঙ্গে মিশেছে, কোথায় গেছে সে অনুযায়ী তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এটার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারব না। তাদের যতো কন্ট্যাক্ট আইডেন্টিফাই করেছি সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি।’

বিদেশ থেকে আসার ক্ষেত্রে কোনো বিধি নিষেধ দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘যেসব দেশে বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেসব দেশ থেকে যেন কম আসে। এমনকি আমাদের যারা সে দেশে আছে তাদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে যেসব দেশে বেশি প্রাদুর্ভাব তাদের অনঅ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত করেছি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমরা পরামর্শ দিয়েছি।’

আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব দেশে বেশি আক্রান্ত সেই সব দেশের অনঅ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত করেছি। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ দিয়েছি- এগুলো করার দায়িত্ব পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।’

এদিকে দেশে নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। সোমবার দুপুরে আইইডিসিআর কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

আইইডিসিআর মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে রোববার তিনজনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর হটলাইনে ৫০৯টি ফোন পেয়েছি। এর মধ্যে ৪৪৯টি করোনা সংক্রান্ত। পরে চারজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তাদের কারও শরীরেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।’

বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে ১৪দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে কেউ এলে অবশ্যই বাড়িতে অন্তত দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এ সময় ওই ব্যক্তি বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করলে প্রতিবেশীদের স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, তিনি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তিনি যেন বাসাতেই থাকেন।’

বিদেশ ফেরতদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ না করারও অনুরোধ জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘আক্রান্ত রোগী আছে, কিন্তু আতংকিত হবার কোনো কারণ নেই। ছড়িয়ে পড়ার কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই অযথা মাস্ক ব্যবহার না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলুন।’

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খালা হচ্ছে, সেখানেও হটলাইন নম্বর খোলা হবে। কোভিড-নাইনটিন রোগে চীনের অবস্থা উন্নত হচ্ছে কিন্তু একশ ছয়টি দেশের সাথে যুক্ত হয়েছে আরও ৮টি দেশ। আক্রান্ত যারা হয়েছেন, এই মানুষগুলো যাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদেরও তালিকাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

সামাজিকভাবে যাতে হেয় না হয় সে জন্য করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য ও পরিচয় বাইরে প্রচার না করার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ প্রতিনিধি জানান, ‘বিশ্ব বাস্তবতায় রোগটির সংক্রমণ অস্বাভাবিক নয়। প্রতিরোধে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ মহাপরিচালক জানান, ‘অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাড়িতে বিচ্ছিন্ন থেকে আইইডিসিআর এর সাথে যোগাযোগ করুন।’

অন্যদিকে, শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘ছয় দেশ থেকে কেউ ফিরলে তাকে অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। দেশগুলো হচ্ছে- চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান ও থাইল্যান্ড।’

শেয়ার করুণ

Comments are closed.