টপ পোষ্ট

সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ নিহত ১৪ : আহত ৮২ জন

0

দাউদকান্দিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৪০ ফুট নিচে পড়ে যায় বাস

 দেশের ছয় জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৮২ জন আহত হয়েছেন।  গত শুক্রবার গভীর রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে কুমিল্লায় ছয়জন, নওগাঁয় তিনজন, আশুলিয়ায় দুইজন, জয়পুরহাটে দুইজন ও নেত্রকোনায় একজন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮২ জন, তাদের : মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। : আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, চালক ঘুম চোখে বাস চালানোর কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে একটি যাত্রীবাহী বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৫২৩৯) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২৫ জন। গতকাল শনিবার সকাল ৭টায় দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা জিংলাতলী গ্রামের ব্রিজের নিকট এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদেরকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কুমিল্লা ও ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। আহত যাত্রীদের  বক্তব্য, বারবার বলার পরেও চালক গাড়ি থামিয়ে মুখ ধুয়ে নেননি। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আউয়াল বিষয়টি জানিয়েছেন। নিহত ৫ জনের  পরিচয় পাওয়া গেছে । বাকি এক জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহত আতিয়ার রহমান (৪৮) নীলফামারী জেলা ডিমলা উপজেলার পাঙ্গা গ্রামের আয়েত আলী ছেলে, মো. শাহজাহান মিয়া (৪০) পিতা মৃত মুনছুর আলী, গ্রাম গরধর্মপাল, জলঢাকা, নীলফামারী, এনামুল হক (৬০), পিতামৃত গাটিয় সরকার, গ্রাম ধর্মপাল, জলঢাকা, নীলফামারী, বাবু (১৮) পিতা মমিনুর, গ্রাম উত্তর গোমনাতী, ডোমার, নীলফামারী, ফারুক হোসেন (২৮) পিতা জাকালা, গ্রাম মেলাপাঙ্গা, ডোমার নীলফামারী।  অপরজন ২৫-২৬ বছরের যুবক তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। : দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা থেকে ছেড়ে আসা কুমিল্লাগামী ঝুমুর পরিবহনের একটি বাস মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী ব্রিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৪০ ফুট নিচে পাশের খালে পড়ে যায়। এতে দুর্ঘটনায় পর ঘটনাস্থলেই তিন জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে একজন এবং ঢাকায়  নেয়ার পথে একজন মারা যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট বাসটি উদ্ধারকালে বাসের নিচ থেকে আরও একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট ৬ জন যাত্রী নিহত হয় এবং মারাত্মকভাবে আহত হয় ২৫ জন যাত্রী। আহতদের দাউদকান্দির গৌরীপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিটের সহযোগিতায় হাইওয়ে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৩ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। : আহত বাসযাত্রী সেকান্দর আলী বলেন, ঢাকা পার হওয়ার পর পরই চালক ঘুমের মধ্যে চালিয়ে আসছিল। আমরা বারবার চালককে বলেছিলাম একটা হোটেলে থামিয়ে মুখ হাত দৌত করে চা খেয়ে পুনরায় চালাতে বলেছিলাম। সে বলে কুমিল্লা গিয়ে একবারে চা খাবে। আমাদের কথা শুনে নাই। সেই ঘুমের মধ্যে গাড়িটা ফালাইয়া দিছে। হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, নীলফামারী থেকে আগত বাস যাত্রী বেশির ভাগই দিনমজুর শ্রমিক। তারা কাজের সন্ধানের কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে কাজ করা জন্য এসেছিল। এ রিপোর্ট প্রেরণ পর্যন্ত লাশ ও গাড়ি পুলিশ হেফাজতে তবে গাড়ির চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। : নওগা প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় গতকাল শনিবার সকালে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন  নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৩ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে লক্ষ্মণ চন্দ্রের (৩৫) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে ভটভটি যোগে নওগাঁ শহরে যাবার সময় উপজেলার রসুলপুর মোড়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রলির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই বিশ্বজিৎ ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। এবং লক্ষ্মণসহ আরও দুজন গুরুতর আহত হয়। মৃত বিশ্বজিৎ আত্রাই উপজেলার রসুলপুর গ্রামের অনাথ চন্দ্রের ছেলে ও জাহাঙ্গীর একই গ্রামের আজাদ হোসেনের ছেলে। আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুদ্দৌজা জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আহত লক্ষ্মণ চন্দ্রের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। : এদিকে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা বাজার থেকে নাজমুল হক নামের এক ভটভটি চালক ভটভটি নিয়ে নওগাঁ শহরে আসছিলেন। সকাল ১১টার দিকে হাঁপানিয়া বাজারে এলে ভটভটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে ওই চালক ঘটনাস্থলে মারা যান। এ ব্যাপারে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আশুলিয়া প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় বাবা আজাদ ও মেয়ে মরিয়ম (৩) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুর মা আরজু বেগম। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, সকালে মা-বাবার সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নবীনগর যাচ্ছিল মরিয়ম। আশুলিয়া থানার এসআই রহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকালে একটি ব্যাটারীচালিত অটোরিকশায় করে  মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার আজাদ তার স্ত্রী আরজু ৩ বছরের শিশু মরিয়মকে নিয়ে নবীনগর যাচ্ছিল। অটোটি নিরিবিলি এলাকায় পৌঁছলে পিছন দিক থেকে মাটি ভর্তি একটি ট্রাক অটো রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এসময় অটোরিকশাটিতে থাকা তিনজনই মহাসড়কে ছিটকে পড়ে। স্পানীয়রা আহতদেরকে পার্শ্ববর্তী গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার, মরিয়মকে নিহত বলে ঘোষণা করে। পরে  বাবা ও মাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার পথে তাদের অবস্থা আরও অবনতি হলে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার পর  বাবাও নিহত হন। : জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের কালাই উপজেলায় যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। এ সময় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় কালাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বাঁশের ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিশ্বজিত বর্মণ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কালাই থানা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, রাতে কালাইয়ের বাঁশের ব্রিজ এলাকায় ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের সঙ্গে জয়পুরহাটগামী এইচ আর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি লোকাল বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই লোকাল বাসের দুই যাত্রী নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ৫০ জন যাত্রী। : কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহত এক নারীর লাশ তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছে। অন্য এক পুরুষের লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। কালাই থানার ওসি (তদন্ত) বিশ্বজিত বর্মন জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একজনের লাশ উদ্ধার করেছে। তবে দুর্ঘটনায় অপর এক নারীর লাশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের জানা নেই। নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার বাইড়াউড়ায় বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান (৪৫) নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হাবিবুর আটপাড়া উপজেলার তেলীগাতি ইউনিয়নের কাছারপুর গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিন ফকিরের ছেলে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় চালক কেন্দুয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আনিছুর রহমান (৪২) আহত হয়েছেন। তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ছানোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। : মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পোড়াপাড়া-যুগিন্দা সড়কে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত আলগামন উল্টে ১০ জন নির্মাণ শ্রমিক আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত রাশিদুল ইসলাম জানান, যুগিন্দা থেকে আলগামন করে ১৬ জন নির্মাণ শ্রমিক গাংনী যাচ্ছিলেন। যুগিন্দা মোড় নামক স্থানে বিপরীত থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে আলগামনটি উল্টে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। এ সময় সকল যাত্রীই আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।

সুত্রঃ daily dinkal

শেয়ার করুণ

আপনার মন্তব্য দিন