টপ পোষ্ট

আওয়ামীলীগের যুগে যুগে নেতৃত্বে যারা

0

প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরে নিয়মিত ২২টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে আওয়ামী লীগের। এসব সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায় থেকে উঠে আসা নেতারাই ঐতিহ্যবাহী দলটির নেতৃত্বে এসেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিশেষ প্রয়োজনে সাতটি বিশেষ সম্মেলন করে এই দল।

এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ ১০ বার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চারবার করে সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দু’বার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি হন। সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন একবার দলের আহ্বায়ক ছিলেন।

দলটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ৯ জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে সাধারণ সম্পাদক হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এ ছাড়া তাজউদ্দীন আহমদ ও ওবায়দুল কাদের তিনবার করে; আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক হন।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন তথা প্রথম জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। ৪০ সদস্যের কমিটিতে মওলানা ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক হন। কারাগারে থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। পরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

১৯৫৩ সালের ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনেও সভাপতি হন মওলানা ভাসানী। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর রূপমহল সিনেমা হলে তৃতীয় সম্মেলনে সব ধর্ম-বর্ণের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠায় দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। সম্মেলনে ফের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারীতে চতুর্থ সম্মেলনে মওলানা ভাসানী সভাপতি ও শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন। তবে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করলে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ৬ থেকে ৮ মার্চ ঢাকার ইডেন হোটেলে পঞ্চম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে মাওলানা তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ ইডেন হোটেলে ষষ্ঠ সম্মেলনে প্রথম দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৬৮ সালের ১৯ ও ২০ অক্টোবর একই স্থানে সপ্তম সম্মেলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান আবারও সভাপতি হন। তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে ৪ ও ৫ জুন একই স্থানে অষ্টম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক পদে টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হন।

১৯৭২ সালের ৭ ও ৮ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম এবং সব মিলিয়ে নবম জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭৪ সালের ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা দলের পদে থাকতে পারবেন না। ফলে বঙ্গবন্ধু দলীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলে ওই পদে আসেন এ এইচ এম কামারুজ্জামান। সাধারণ সম্পাদক হন জিল্লুর রহমান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত হন চার জাতীয় নেতা। এই দুঃসময়ে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর মহিউদ্দিন আহমেদ দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেনে ১১তম সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক করা হয় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে। ১৯৭৮ সালের ৩ থেকে ৫ মার্চ একই স্থানে ১২তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল মালেক উকিল ও আবদুর রাজ্জাক।

১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল ইডেনে ১৩তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনে আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক হলেও ১৯৮২ সালে দলত্যাগ করেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত ১৪তম সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯২ সালের ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর একই স্থানে ১৫তম সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন।

পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত ঘটনার ২১ বছর পর দল ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭ সালের ৬ ও ৭ মে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১৬তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও জিল্লুর রহমান। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে ১৭তম সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও আবদুল জলিল সাধারণ সম্পাদক হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের ১৮তম সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর একই স্থানে ২০তম সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর একই স্থানে ২১তম সম্মেলনেও শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হন। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ২২তম জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা টানা দশমবারের মতো সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

শেয়ার করুণ

Comments are closed.