উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা আড়াইটায় ভারতের দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বার্ধক্যজনিত রোগে তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি লিখেছেন, ‘অনুপ ঘোষালের প্রয়াণে সঙ্গীতজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমি অনুপ ঘোষালের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’র মতো ছবিতে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন তিনি। তবে নজরুলগীতি এবং শ্যামাসঙ্গীতের জন্য সঙ্গীত জগতে নামডাক পেয়েছিলেন। এছাড়া হিন্দিসহ নানা ভাষার ছবিতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিনি। তপন সিনহা পরিচালিত ‘সাগিনা মাহাতো’ চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল।
সংগীতজগতের সঙ্গে যুক্ত পরিবারেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা অনুপ ঘোষালের। বাবা অমূল্যচন্দ্র ঘোষাল, মা লাবণ্য ঘোষাল। মাকে দেখেই সংগীতজগতের প্রতি অনুরাগ জন্মায় তার।
অনুপ ঘোষাল আশুতোষ কলেজ থেকে মানবিকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ। নজরুলগীতির রূপ ও রসানুভূতি ছিল তার গবেষণার বিষয়।
বাংলা চলচ্চিত্রে তার অনেক গান জনপ্রিয় হয়েছে। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল শেখর কাপুরের পরিচালনায় হিন্দি ছবি ‘মাসুম’। নাসিরুদ্দিন শাহ ও শাবানা আজমি অভিনীত সেই ছবিতে অনুপ ঘোষালের ‘তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি হ্যায়রান হুঁ ম্যায়…’ শিরোনামের গানটি তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল।
এছাড়া তার কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ‘এনেছি আমার শত জনমের প্রেম’, ‘আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়’, ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’, ‘আমার এ ভালোবাসা’, ‘পৃথিবী আমারে চায়’ প্রভৃতি শিরোনামের গান।
পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানার শেষদিকে ‘রাজনৈতিক পরিবর্তন’ আন্দোলনের সঙ্গী হন তিনি। ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জি তাকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেন। হুগলির উত্তরপাড়া বিধানসভা আসন থেকে প্রথমবার প্রার্থী হয়েই জয় পান। পরে আর তৃণমূলের টিকিট পাননি তিনি। ২০১১ সালে অনুপ ঘোষালকে ‘নজরুল স্মৃতি পুরস্কার’ ও ২০১৩ সালে ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’ দেওয়া হয়।
সূত্র : খবর আনন্দবাজার