ক্যারিয়ারের শেষ
ওয়ানডে ম্যাচ! সীমিত ওভারের এই ক্রিকেটে আর কখনওই যে গেইলের সঙ্গ পাওয়ার উপায় নেই!
তাইতো ব্যাটিংয়ে নামার আগে ক্রিস গেইলের সঙ্গে একবার করে হ্যান্ডশেক করলেন উইন্ডিজ
দলের সবাই।
হ্যাঁ, ক্যারিয়ারের
শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচটাই খেলে ফেললেন ক্যারিবিয় ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। বিদায়ের
ঘোষণাটা অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডেতেও সেই চিরচেনা ব্যাটিং ঝড় দেখা
গেলো গেইলের ব্যাটে। ৪১ বলে ৭২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেন তিনি। তার ৮ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কার
ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গেল ভারতের শুরুর বোলিং।
দুই বাঁহাতি এভিন
লুইস ও গেইলের ওপেনিং জুটিতে পোর্ট অব স্পেনে সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট
ইন্ডিজ মাত্র ১০.৫ ওভারে তুলল ১১৫ রান! এর মধ্যে ৩ ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারিতে ২৯ বলে ৪৩
রান তুলে ফিরেছেন লুইস।
আর অন্যপ্রান্তে
ঠিকই তার হাফসেঞ্চুরি তুলে নিলেন গেইল। মাত্র ৩০ বলে এল তার হাফসেঞ্চুরি। যা ছিলো তার
৩০১ ওয়ানডে ম্যাচে ৫৪তম ফিফটি। ২৯৩ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছেন ১০ হাজার ৪৮০। যা সংগ্রহের
পথে হাঁকিয়েছেন ২৫টি শতক। যেখানে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ২১৫ রানের।
১৪ আগস্ট বুধাবার
ছিল তার জীবনের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। তাই এই হাফসেঞ্চুরির আনন্দ একটু অন্যভাবে উদযাপন
করলেন গেইল। ছক্কা হাঁকিয়ে হাফসেঞ্চুরি পুরো করার পর হেলমেট খুললেন ক্রিস্টোফার। ব্যাটকে
সোজা আকাশের দিকে তাক করালেন। তারপর হেলমেট পরিয়ে দিলেন সেই ব্যাটের মাথায়। মনে হলো,
ঠিক যেন ব্যাটকে মুকুট পরালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ‘দ্য এন্টারটেইনার’ গেইল!
হাফসেঞ্চুরির
পর গেইলের ব্যাটে ঝড়ের মাত্রা যেন আরও বেড়ে গেল। যাকে সামনে পাচ্ছেন তাকেই উড়িয়ে মারছেন।
যা আছড়ে পড়ছে গ্যালারিতে গিয়ে। একহাতে ছক্কা হাঁকানোর দৃশ্যেরও দেখা মিলল এদিন। মনে
হচ্ছিলো শেষটা হয়ত সেঞ্চুরির আলোয় আলোকিত করেই বিদায় নেবেন গেইল।
কিন্তু তা আর
হলো কই। সেঞ্চুরির স্বপ্ন জাগিয়েই ফিরলেন ৭২ রানে। খলিল আহমেদের বলে একটু আগেভাগে শট
খেললেন গেইল। ব্যাটে ঠিকমতো এল না বলটা। ফলে যা হবার তাই হলো, ক্যাচ উঠল। তাও আবার
বন্ধ বিরাট কোহলির কাছে। কিছুটা সরে এসে ক্যাচটা হাতে নিলেন ভারিতীয় কাউন্টার পার্টনার।
যাতে গেইলের ওয়ানডে ক্যারিয়ার থেমে গেলো সেখানেই। সাজঘরে ফিরলেন ক্রিস্টোফার হেনরি
গেইল।
ততক্ষণে অবশ্য
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই ম্যাচে বড় সংগ্রহের পথে ছোটার শক্ত পুঁজি পেয়ে গেছে। তখন ১১.৪ ওভারে
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ২ উইকেটে ১২১ রান।
গেইল আউট হয়ে
ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় ভারতের ক্রিকেটাররা ছুটে এসে তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন। কেউ
এসে পিঠ চাপড়ে দেন। বন্ধু কোহলি তো বুকেই জড়িয়ে নিলেন গেইলকে। পরে পুরো গ্যালারি উঠে
দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে গেইলকে গুডবাই জানাল।
মাঠ ছাড়ার সময়
গেইল আরেকবার হেলমেট খুলে ব্যাটের মাথায় রাখলেন। ‘মুকুট’ পরানো সেই ব্যাটকে উঁচিয়ে
ধরলেন। ধীরপায়ে ফিরলেন ড্রেসিংরুমে। বিদায়ের একটা দুঃখ আছে। কিন্তু মুখে ঠিকই সেই পরিচিত
হাসি ধরে রাখলেন। এই ম্যাচে গেইলের জার্সি নাম্বার ছিল ৩০১। গেইলের ওয়ানডে ম্যাচের
সংখ্যা যে ওটাই।
সত্যিকারের একজন
‘এন্টারটেইনার’তো এভাবেই বিদায় নেন! ধন্যবাদ স্টাইলিস্ট ক্রিস গেইল। ক্রিকেট আনন্দ
থেকে সবকিছুর জন্যই! তবে বিপিএল, আইপিএলসহ বিশ্বের টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে ক্যারিবিয়
‘এন্টারটেইনার’কে দেখা যাবে ঠিকই।
এদিকে, গেইল আউট
হওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই পোর্ট অব স্পেনের মাঠ সিক্ত হয় মেঘের কান্নায়। সেটা গেইলের বিদায়ের
দুঃখেই কিনা কে জানে। তবে সেই বৃষ্টিতে ভারত বনাম উইন্ডিজের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে
ম্যাচটি এখন আপাতত বন্ধ রয়েছে।
তবে এর আগেই ২২
ওভারের খেলায় ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান সংগ্রহ করেছে উইন্ডিজ শিবির। শাই হোপ ১৯ রানে
এবং শিমরন হেটমেয়ার ১৮ রানে ক্রিজে আছেন।
