টপ পোষ্ট

সিডরের ১৬ বছর, টেকসই বাঁধের অপেক্ষায় উপকূলবাসী

0

সুপার সাইক্লোন সিডরের ১৬ বছর। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সরকারি হিসেবে এই দিনে প্রায় ৯শ’ ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সিডরের আঘাতে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েক ‘ কোটি টাকার। 

স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে বাগেরহাটের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেরিবাঁধ। গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে বাঁধ হস্তান্তরের আগেই শরণখোলা উপজেলার বগী, গাবতলা, মোরেলগঞ্জের আমতলা এলাকা থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বাঁধের ব্লক ধ্বসে বিলীন হচ্ছে নদীতে। এছাড়াও বেশকয়েকটি স্থান ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। হস্তান্তরের আগেই এমন অবস্থা হওয়ায় চিন্তিত এলাকাবাসী।

শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বারেক বলেন, বলেশ্বর নদীর ভাঙ্গনে আমার ও পরিবারের প্রায় ১৫০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সিডরে স্বজন হারিয়েছি। বাঁধ নির্মাণ শুরু হলে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ভাঙ্গন ও দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাব। সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। টেকসই বেরিবাঁধেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যেকোন মুহূর্তে বড় ধরণের ভাঙ্গন শুরু হবে। এখন মনে হচ্ছে বিপুল টাকার এই বাঁধ আমাদের কোন কাজে আসবে না।

গাবতলা এলকার আঃ রহিম দুলাল বলেন, বাঁধ নির্মাণের শুরুতেই আমরা নদী শাসনের দাবি করেছিলাম। এজন্য সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছিলাম। তারপরও নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মান করেছে সিইআইপি প্রকল্প। এখন বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, ফসলি জমি, গাছপালা, বসত ঘর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ফসিয়াতলা এলাকার গফার তালুকদার বলেন, প্রতিনিয়তই ভাঙ্গনে ধ্বসে পড়ছে টেকসই বাঁধের ব্লকগুলো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন বন্ধের চেষ্টা করলেও কোন কাজে আসছে না। নদীতে পানির গভীরতা ৫০ থেকে ৬০ হাতের উপরে। সরকারের কোটি কোটি টাকা জলেই যাচ্ছে।

এদিকে ভাঙ্গনরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে কোন কাজে আসছেনা বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারের প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গেল ১৫ দিনে গাবতলায় ভাঙ্গনরোধে ২০০ মিটার জায়গায় ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তারপরেও ভাঙ্গন রোধ হচ্ছে না। এখানে কংক্রিটের ব্লক ফেলানো জরুরি বলে জানান তিনি।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, সিডরের পরে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টেকসই বেরিবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সিআইপি প্রকল্পের দূরদর্শিতার অভাবে নদী শাসন না করেই বাঁধ নির্মাণের ফলে আজ বাঁধটি হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। খুব শীঘ্রই নদী শাসন করে বাঁধটি টেকসই করা দরকার।

সিইআইপি প্রকল্পের মাঠ প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল ইসলাম নাহিদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার বেরিবাঁধ নির্মানের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে কাজ হস্তান্তন করা হবে। তবে বলেশ্বর নদীর স্রোত তীব্র হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা মাঠে থেকে পর্যবেক্ষণ করে কাজ করছি। তবে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী শাসন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ৬২ কিলোমিটার বেরিবাঁধের ২০ কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ। নদীর গভীরতা ও স্রোত বেশি থাকায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় নদী শাসনের একটি প্রকল্প প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে ভাঙ্গনের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

উল্লেখ্যে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাতে উপকূলীয় শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের প্রায় ২০ কিঃমিঃ বেড়িবাধ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ২২০ কিঃমিঃ বেগের ঘূর্ণিঝড় আর ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় বিশ গ্রামের মানুষের ঘর-বাড়ি, গাছপালা, রাস্তাঘাট। বলেশ্বর নদ তীরবর্তী বগী, দক্ষিণ সাউথখালী, উত্তর সাউথখালীসহ ৫টি গ্রামের প্রায় ১২শ’ মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শিশু ও নারী। গবাদি পশু মারা যায় দশ সহাস্রাধিক ।

বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাড়াতে সেদিন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ বিদেশীরাও বিভিন্ন সাহায্য নিয়ে ছুটে আসেন। সর্বহারা মানুষ ধ্বংস্তূপের মধ্যে দাঁড়ি

শেয়ার করুণ

Comments are closed.