টপ পোষ্ট

কঠিন সময়ে ভারতের সহযোগিতার কথা স্মরণ শেখ হাসিনার

0

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ তিন বছর পর ভারত সফরে যাচ্ছেন। ঠিক তার আগে তিনি, ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে একটি আবেগঘন টেলিভিশন সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। যেখানে তিনি তার বিভীষিকাময় কঠিন সময়গুলোর কথা তুলে ধরেছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) সাক্ষাত্কারটি প্রকাশ করেছেন সংবাদ সংস্থা এএনআই।

এই সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তিনি একসময় দিল্লির অভিজাত পান্ডারা রোডের গোপন বাসিন্দা ছিলেন, যেখানে তিনি তার সন্তানদের সঙ্গে একটি অন্য পরিচয় নিয়ে থাকতেন। তিনি এমনটি করেছিলেন তার পিতার হত্যাকারীদের নজর এড়িয়ে থাকতে।

সাক্ষাত্কারে বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে শেখ হাসিনার।

তিনি জানান, তার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া জার্মানিতে থাকতেন। তিনি স্বামীর কাছে যেতে দেশ ছেড়েছিলেন ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই। সেদিন তাকে এবং তার বোন শেখ রেহানাকে বিমানবন্দরে বিদায় দিতে এসেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। সেটিই ছিল পিতামাতাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার শেষ দেখা।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার স্বামী বিদেশে ছিল, তাই আমি একই বাড়িতে (বাবা-মায়ের সঙ্গে) থাকতাম। তাই সেদিন সবাই আমার বাবা, মা, আমার তিন ভাই, দুই ভাইয়ের নববিবাহিত বধূসহ পরিবারের সকলেই আমাকে ও রেহানাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে এসেছিল। আর সেই দিনটি ছিল পরিবারের সবাইকে দেখা শেষ দিন।”

ঠিক তার ১৫ দিন পর ১৫ আগস্ট সকালে, হাসিনা এমন খবর পান যা তার বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। তিনি জানতে পারেন তার বাবা কিংবদন্তি রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।

“এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল। অবিশ্বাস্য যে, কোনো বাঙালি এটা করতে পারে এবং তখনও আমরা জানতাম না কীভাবে, আসলে কী ঘটেছিল। শুধুমাত্র একটি অভ্যুত্থান হয়েছিল এবং তারপর আমরা শুনলাম যে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানতাম না যে, পরিবারের সকল (নিহতদের মধ্যে) সদস্য ছিল।”

শেখ হাসিনা স্মরণ করে বলেন, সেই কঠিন সময়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রথম দেশগুলোর একটি।
জার্মানিতে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীই প্রথম ব্যক্তি যিনি তার পরিবারের হত্যার বিবরণ দেন শেখ হাসিনাকে।

স্মৃতি রোমন্থণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি জানতাম না আমি কোথায় আছি। কিন্তু আমি আমার বোনের কথা ভেবেছিলাম, সে আমার ১০ বছরের ছোট। তাই আমি ভাবলাম কিভাবে সে এটা নেবে। এটা তার জন্য খুব কঠিন।”

সেই কঠিন সময়ে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও যুগোস্লাভিয়া থেকে মার্শাল টিটো সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।

“মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তথ্য পাঠিয়েছিলেন যে, তিনি আমাদের নিরাপত্তা এবং আশ্রয় দিতে চান। তাই আমরা পেয়েছি, বিশেষ করে যুগোস্লাভিয়া থেকে মার্শাল টিটো এবং মিসেস গান্ধীর কাছ থেকে। আমরা এখানে (দিল্লি) ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারণ আমাদের মনের মধ্যে ছিল, আমরা যদি দিল্লি যাই তবে সেখান থেকে দেশে ফিরে যেতে পারব এবং জানতে পারব পরিবারের কতজন সদস্য বেঁচে আছেন।”

তিনি বলেন, “তারপর যখন আমরা দিল্লিতে ফিরে আসি, প্রথমে তারা আমাদেরকে সমস্ত নিরাপত্তাসহ একটি বাড়িতে রেখেছিল, কারণ তারাও আমাদের নিয়ে চিন্তিত ছিল।”

আর এই থেকেই সহজেই উপলব্ধি করা যায় পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও হাসিনার কণ্ঠে এখনো সেই বেদনা প্রতিফলিত হয়।

তিনিও সম্ভাব্য টার্গেট বলে মনে করেন কিনা জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, “যে দুর্বৃত্তরা তার বাবার ওপর হামলা করেছে তারা অন্য আত্মীয়দের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে এবং তার আত্মীয়দের কয়েকজনকে হত্যা করেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবার ও নিকট আত্মীয় সকলকে হত্যা করা। ষড়যন্ত্রকারীদের স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ যেন আর ক্ষমতায় না আসে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “তারা শুধু আমার বাবাকে হত্যা করেনি, তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকেও বদলে দিয়েছে। সব কিছু শুধু এক রাতে বদলে গেছে এবং সেই খুনিরা আসলে এখনও আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।”

শেয়ার করুণ

Comments are closed.